নেতাইয়ে শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
গেরুয়া কার্ডে বিজয়া সম্মিলনীর আমন্ত্রণ। সঙ্গে রাজস্থানি পাগড়ি মাথায় শুভেন্দু অধিকারীর ছবি। তিনি রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের উপর তলার নেতা। কিন্তু সেই আমন্ত্রণপত্রে সে সব পরিচয়ের নামগন্ধ নেই! বরং, আয়োজকদের পরিচয় হিসেবে লেখা হয়েছে ‘আমরা দাদার অনুগামী’।
পুরুলিয়া জেলায় ‘অনুগামীদের’ ছড়িয়ে দেওয়া এমন আমন্ত্রণপত্র ঘিরে তাই রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ৭ নভেম্বর। তবে তার আগে আজ, শনিবার মেদিনীপুর শহরেও একই রকম আয়োজন করেছে ক্লাব সমন্বয় কমিটি। সেখানেও রাজনৈতিক বা সরকারি পরিচয়ের বাইরে তিনি শুধুই শুভেন্দু অধিকারী।
তাঁর সঙ্গে দল ও সরকারের দূরত্ব বাড়ছে বলে কিছু দিন ধরে চর্চা চলছে। দলীয় কর্মসূচি এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁকে ইদানীং দেখা যায়নি। এ বার গেরুয়া কার্ডে পাগড়ি মাথায় তাঁর ছবি ছাপিয়ে ‘দাদার অনুগামী’রা যে ভাবে বিজয়া সম্মিলনীর জন্য সক্রিয় হয়েছেন, তা রাজনৈতিক মহলের নজর কেড়েছে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্য সংক্রমণ ঠেকানো, ভিড় যাচাইয়ে উৎসব-সমীক্ষা
পুরুলিয়ার অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূলেরই সৈনিক। কিন্তু দলের নামে কর্মসূচি করলে দলের অনুমতি নিতে হয়। সরাসরি দল করেন না, এ রকম অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও সেখানে যেতে পারেন না। তাই দাদার ফ্যান ক্লাবের সদস্যেরা এই নামে আয়োজন করেছেন। এই ব্যানার বিভিন্ন ব্লকেও লাগানো হচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, শুভেন্দুও ওই দিন থাকতে পারেন। তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো শুক্রবার বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবুর ছবি দেওয়া আমন্ত্রণপত্র ছড়িয়ে বিজয়া সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে বলে খবর নেই।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তৃণমূলের অনেকেরই মোহভঙ্গ হয়েছে।’’ দিনভর চেষ্টা করেও শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ, নন্দীগ্রাম বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান মেঘনাদ পালের বক্তব্য, ‘‘একেবারেই অরাজনৈতিক কর্মসূচি। তাই হয়তো উদ্যোক্তারা চেয়েছেন শুভেন্দুবাবুর মন্ত্রী বা ওই ধরনের পরিচয়ের বদলে তাঁর জননেতার ভাবমূর্তি সামনে রাখতে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, গেরুয়া রং ব্যবহারও উদ্যোক্তাদের পছন্দের বিষয়।
আরও পড়ুন: মণীশ খুনে সিআইডি-র জালে ২ ভাড়াটে খুনি, ভিন্রাজ্যে চলছে তল্লাশি
অন্য দিকে, তৃণমূল নেতৃত্ব যে শুভেন্দুকে ঘিরে এই সব কার্যকলাপ ভাল চোখে দেখছেন না, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে তাঁর কটাক্ষ, ‘রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী’। কাঁথির সাংসদ, প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা শুভেন্দুর পিতা শিশির অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘উনি কেন এ কথা বললেন, তার ব্যাখ্যা ফিরহাদই করতে পারবেন। এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।’’ তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা এ দিন জানিয়েছেন, বিজয়া দশমীর পরেও দলনেত্রীর সঙ্গে শিশিরবাবুর কথা হয়েছে।