পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গা থেকে বিভিন্ন সময়ে নানান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যেরা গ্রেফতার হয়েছে। দেশবিরোধী কাজের অভিযোগে ইউএপিএ ধারায় গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে কিছু কিছু। মূলত সেই সব ঘটনাকে সামনে রেখেই জঙ্গি দমনে একটি ‘রুট ম্যাপ’ তৈরি করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্তরে। সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ হিসেবে, বাংলার কোথায় কোথায় জঙ্গি গতিবিধি রয়েছে কিংবাঅতীতে জঙ্গিরা কোন কোন এলাকায় বিশেষ ভাবে সক্রিয় ছিল, রাজ্যের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তার তালিকা চেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ওই সব এলাকাকে ‘জঙ্গি হট স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে কেন্দ্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, রাজ্যের জঙ্গি দমনে নিয়োজিত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির বৈঠক হয়। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধি ছাড়াও এসআইবি, কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স বুরো-সহ জঙ্গি দমনে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই ওই হট-স্পটের তালিকা চাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্যান্য রাজ্যেও জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে এই ধরনের ‘হট স্পট’ চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। বেশ কিছু রাজ্য ইতিমধ্যে তাদের তালিকা জমা দিয়েছে। তবে বাংলা থেকে ওই ধরনের জায়গার তালিকা এখনও জমা পড়েনি। যদিও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় সক্রিয় বলে গোয়েন্দাদের বিভিন্ন রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
ভবানী ভবন সূত্রের খবর, হট স্পটের যে-তালিকা তৈরি হচ্ছে, তাতে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়া, উত্তর দিনাজপুর, বর্ধমানের কিছু জায়গার নাম থাকার কথা। ওই সব এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে এমন অনেক জঙ্গি ধরা পড়েছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে ইউএপিএ (বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন) ধারায়। ২০১২ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র সক্রিয় যোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তার সূত্র ধরেই বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে জেএমবি সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। ২০২০ সালে মুর্শিদাবাদ থেকে এনআইএ-র হাতে গ্রেফতার হয় ছ’জন আল কায়দা জঙ্গি। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে মহিলা জঙ্গি তানিয়া পরভিনকে গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশ। গত বছরেই দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর থানা এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে তিন জন গ্রেফতার হয়েছিল কলকাতা পুলিশের হাতে।
এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, পথ-দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যে-সব জায়গায় বেশি প্রাণহানি ঘটে, সেগুলিকে বেছে নিয়ে ‘ব্ল্যাক স্পট’ বানানো হয়। উদ্দেশ্য, সেই সব জায়গায় দুর্ঘটনা রোধে বিশেষ নজরদারি চালানো। তেমনই কোথায় জঙ্গি ধরা পড়েছে বা তদন্তে কোন কোন জায়গায় জঙ্গি কাজকর্মের প্রমাণ মিলেছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করে ‘হট স্পট’ তকমা দিলে আগামী দিনে সেখানে সব তদন্তকারী সংস্থার পক্ষেই নজরদারি চালাতে সুবিধা হবে।
গোয়েন্দাকর্তারা জানান, বাংলায় বর্তমানে জঙ্গি গতিবিধি তেমন নেই। যে-সব জায়গায় কয়েক বছর আগেও জঙ্গি বা জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন সন্দেহভাজনদের দেখা মিলত, পরপর পুলিশি অভিযান, নজরদারি ও গ্রেফতারির পরে সেই সব কার্যকলাপ বা যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।