Bridge

কাঁচামাল না নকশা? খোঁজ শুরু গলদের

ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে আধ কিলোমিটার দূরে গঙ্গার উপরে দ্বিতীয় সেতুটির কাজ চলছে বছরখানেক ধরে।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৩০
Share:

ফরাক্কায় ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ সেতুর অংশ। নিজস্ব চিত্র

নিম্নমানের কাঁচামাল এবং নকশায় গলদ— ফরাক্কায় গঙ্গার উপরে নির্মীয়মাণ সেতুর অংশ ভেঙে পড়ার ২৪ ঘণ্টা পরে উঠে এল এই দুই অভিযোগ। উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ নিজেই দাবি করলেন, কাঁচামালের মান ঠিক ছিল না। বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর কাছে নালিশ করবেন বলেও জানাবেন। নকশায় গলদের অভিযোগ তুলেছেন এই দুর্ঘটনায় মৃত সচিন প্রতাপের বাবা উদয়বীর সিংহ। তিনি নিজেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মী। সেতুর কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে আধ কিলোমিটার দূরে গঙ্গার উপরে দ্বিতীয় সেতুটির কাজ চলছে বছরখানেক ধরে। নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে দক্ষিণ ভারত ও চিনের একটি সংস্থা। এখানে শতিনেক কর্মী কাজ করছেন বলে সংস্থাটির দাবি। তবে রবিবার সন্ধ্যায় যখন দুর্ঘটনা ঘটে, সেই সময়ে খুব বেশি কর্মী সেখানে হাজির ছিলেন না বলেই জানানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, সেতুর দু’টি স্তম্ভের উপরে কংক্রিটের স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছিল তখন। স্ল্যাবটি বসিয়ে তাকে মজবুত করে সেতুর সঙ্গে গেঁথে দেওয়ার জন্য লঞ্চিং গার্ডার ব্যবহার করা হয়। সেই গার্ডারটি নিয়মমাফিক সরানো শুরু হতেই বিপত্তি, জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। তাঁরা বলেন, আচমকা প্রচণ্ড শব্দে কংক্রিটের স্ল্যাবটি ভেঙে নীচে পড়ে যায়। তাতেই চাপা পড়ে প্রাণ হারান অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা শ্রীনিবাসন রাও ও দিল্লির সচিন প্রতাপ। জখম হন চার জন।

এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, পুরো এলাকাটি লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। যে স্ল্যাবটি নীচে পড়ে গিয়েছিল, সেটি ভেঙে টুকরো হয়ে গিয়েছে। লোহার রড বেঁকে কংক্রিট ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে। শ্রমিকেরা তখনও আতঙ্ক থেকে বেরোতে পারেননি। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুও। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে অভিযোগ তোলেন, “সেতুর ভেঙে পড়া অংশ দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চলছিল। আর তাতেই বিপত্তি ঘটে।’’ গডকড়ীকে বিষয়টি জানানোর আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ঠিকাদারি সংস্থার কাজে ত্রুটি থাকলে যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়, সেই চেষ্টাও করা হবে।” এ দিনই নিতিনের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী। গডকড়ীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, তিনি তখন ওই মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিংহর কাছে তদন্তের দাবি জানান।

Advertisement

ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালদহের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রকল্প আধিকারিক দীনেশ হানসারিয়া। তিনি বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে লঞ্চিং গার্ডারটি ভেঙে পড়তে পারে। তবে ঘটনায় কারও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আমাদের তদন্তও শুরু হয়েছে।” মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “দুর্ঘটনার পরে অস্বাভাবিক মৃ্ত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আর সেতু ভাঙার ঘটনাতেও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পৃথক ভাবে তদন্ত করে দেখা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে এ দিন বিধানসভায় পয়েন্ট অব ইনফর্মেশন তুলে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার কারণ কী? যান্ত্রিক ত্রুটি, কাটমানি? সেতু তৈরির মালপত্র খারাপ ছিল? তদন্ত হোক।’’ বিজেপির পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার তদন্ত করে দেখুক। আশা করি, তারা দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement