Sagore Dutta Medical College

দাবি আদায়ে টিএমসিপি-র ‘চাপে’ পরীক্ষা বন্ধ সাগর দত্তে

কলেজ কর্তৃপক্ষের উপরে ‘চাপ’ তৈরি করতে পরপর দু’দিন ধরে পরীক্ষা বন্ধ! দাবি আদায়ের জন্য কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের এ হেন কর্মকাণ্ডে রীতিমতো ক্ষুব্ধ সিনিয়র চিকিৎসকেরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২০
Share:

কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

হস্টেলে ঘর মেলেনি। তাই কলেজ কর্তৃপক্ষের উপরে ‘চাপ’ তৈরি করতে পরপর দু’দিন ধরে পরীক্ষা বন্ধ! দাবি আদায়ের জন্য কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের এ হেন কর্মকাণ্ডে রীতিমতো ক্ষুব্ধ সিনিয়র চিকিৎসকেরাও।

Advertisement

এমনিতেই সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে। কখনও এমডি-এমএস পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া পড়ুয়াদের পাশ করানোর চাপ, কখনও আবার পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে শাসকদলের পড়ুয়া নেতার ঘোরাঘুরি অথবা গণ-টোকাটুকি— বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে। অবস্থা এমনই যে, রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই। তারই মধ্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাপে একটি মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার ঘটনা অন্য মাত্রা যোগ করেছে গোটা বিষয়টিতে।

কী বলছে স্বাস্থ্য দফতর? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অনিরুদ্ধ নিয়োগী বলেন, ‘‘কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে পুনরায় নতুন তারিখ স্থির করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষা বন্ধ রাখা যাবে না।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, পড়ুয়াদের একাংশ পরীক্ষা বন্ধ করার মতো সাহস পান কী করে?

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি। সে দিন এমবিবিএসের প্রথম বর্ষের ইন্টারনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। ওই পরীক্ষার ফলাফলের উপরে ভিত্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাঠানো হয় পড়ুয়াদের। ১২৫ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সে দিন সমস্ত রকম প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু কয়েক জন পড়ুয়া প্রথমে এলেও পরে তাঁদের ফিরে যেতে হয়। অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা পরীক্ষা দিতে বাধা দিয়েছেন। এর পরে সোমবার ইন্টারনাল পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনের বিষয় ছিল ফিজ়িয়োলজি। কিন্তু এ দিনও সেই পরীক্ষা হয়নি। যা শুনে হতবাক সিনিয়র চিকিৎসকেরা। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, ৫ জানুয়ারি পরীক্ষা শুরুর দিনকয়েক আগে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের গ্রুপে মেসেজ পাঠিয়ে রীতিমতো হুমকির সুরে পরীক্ষা বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, তাতে হস্টেলের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, যে বা যাঁরা পরীক্ষা দিতে যাবেন, পরবর্তী সময়ে কোনও সমস্যা হলে সেটি তাঁদের নিজের দায়িত্ব। আর ওই বার্তাকে আবেদন না ভেবে যেন নির্দেশ হিসাবে দেখা হয়। সাগর দত্তের এআইডিএসও-র তরফে বিক্রম মণ্ডল বলেন, ‘‘বেশির ভাগ শিক্ষক-চিকিৎসকই ভেবেছেন, পড়ুয়ারা সকলে মিলে পরীক্ষা বয়কট করেছে। কিন্তু সেটা যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাপে ও ভয়ে, তা আজ সমস্ত স্যার-ম্যাডামদের জানিয়েছি।’’

কলেজ কর্তৃপক্ষও পরে জানিয়েছেন, কাল, ১০ জানুয়ারি বায়োকেমিস্ট্রি পরীক্ষা হবে। বিক্রম জানাচ্ছেন, পরীক্ষা না হওয়ায় বেশ কিছু পড়ুয়া শুক্রবার বিকেলে বাড়ি চলে যান। এখন এক দিনের মধ্যে দূরের জেলা থেকে কী ভাবে তাঁরা ফিরবেন, সেই চিন্তা রয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে সৌমিত্র প্রামাণিক বলেন, ‘‘ফরওয়ার্ডেড মেসেজ দিয়ে কি প্রমাণ করা যায়, ওটা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পাঠানো? কোথাও তো লেখা নেই। পরীক্ষার দিন পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিল। বাতিল করা হয়নি।’’ আগামী কালের পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের আপত্তি নেই।

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০১৯ থেকে এমবিবিএসে ২৫টি আসন বেড়েছে। এ দিকে, ঘরের সংখ্যা কম। তাই প্রথম বর্ষকে ডরমিটরিতে রাখা হয়েছে। অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘‘অনভিপ্রেত ঘটনা। আর এটা পরীক্ষা বন্ধের যুক্তি হওয়া উচিত নয়।’’ অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলের পরিকাঠামো সংক্রান্ত দাবি যুক্তিযুক্ত। দাবি আদায়ে তাঁরা আন্দোলনেও যেতে পারে। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু পরীক্ষা বন্ধ রেখে দাবি আদায়ের চেষ্টা ভুল পথ বলেই মনে করি। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের কাছে এই সমস্ত খবর পৌঁছলে পড়ুয়াদের সমস্যা হতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement