গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় এ রাজ্যের বিশিষ্ট জনদের একাংশ উদ্বিগ্ন এবং ভীত। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখার আবেদনের পাশাপাশি গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। শুক্রবার বিশিষ্টজনদের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে স্বাক্ষর রয়েছে অপর্ণা সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, অনুপম রায়ের মতো ব্যক্তিত্বদের।
এ দিন ‘সিটিজেনস্পিক ইন্ডিয়া’ নামে এক সংগঠনের তরফে যাদবপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তাতে নাম রয়েছে অনুপম রায়, অপর্ণা সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, চিত্রা সরকার, মুদার পাথারিয়া, কৌশিক সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, রূপম ইসলাম, সোহাগ সেন-সহ আরও অনেক বিশিষ্ট জনের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হিংসাত্মক ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন তাঁরা। তাঁদের মতে, বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অংশগ্রহণ ও ভাষণকে কেন্দ্র করে যে ভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস, তাতে তাঁরা চিন্তিত-ভীত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে ভাবে একটি আপাতনিরীহ প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রবল তাণ্ডব-হিংসাত্মক ঘটনায় পরিণত হয়েছে, তা নিয়েও চিন্তার ভাঁজ তাঁদের কপালে।
একই সঙ্গে পড়ুয়াদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীদের সহিংস আচরণেও স্তম্ভিত তাঁরা। পড়ুয়াদের মারধরের ঘটনাকে অশনিসংকেত বলে অভিহিত করেছে ওই বিশিষ্টরা। সেই সঙ্গে প্রতিবাদীদের পদক্ষেপ আরও সংযত হওয়া উচিত ছিল বলেও মনে করেন তাঁরা। ক্যাম্পাসের শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা ছাড়াও এই ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের কাছে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত-সহ দোষীদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ওই বিশিষ্টরা।
আরও পড়ুন: কথা বলেই ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম, কড়া বিবৃতি দিয়ে তৃণমূলের অভিযোগ ওড়ালেন রাজ্যপাল
আরও পড়ুন: অবস্থান বিক্ষোভে এবিভিপি, মিছিল বিজেপি-এসএফআইয়ের, যাদবপুরকে ঘিরে উত্তাল শহর
যাদবপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ‘সিটিজেনস্পিক ইন্ডিয়া’-র প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপির একটি অনুষ্ঠানে যান। সেই যোগদানকে ঘিরে যে ভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস, তা সাম্প্রতিক কালে নজিরবিহীন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ঘিরে স্লোগান-বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, পড়ুয়া নিগ্রহ, মন্ত্রীকে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে রাজ্যপালের উপস্থিতি, ক্যাম্পাসে ভাঙচুর-আগুন— সব মিলিয়ে চূড়ান্ত অরাজকতা দেখা গিয়েছিল গত কাল সন্ধ্যায়। ক্যাম্পাসের বাইরেও যাদবপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: উপাচার্যকে কী বললেন বাবুল
আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের মুখোমুখি বাবুল
যাদবপুরের পরিস্থিতি যে দিকে গড়িয়েছিল, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি অন্য একটি বিষয়ও তুলে ধরছেন নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন। তাঁর কথায়, ‘‘গণতান্ত্রিক ভাবে বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার সকলের আছে। প্রতীকী প্রতিবাদ তো হতেই পারে। কিন্তু, বিজেপির একটা মতাদর্শ আছে। পাশাপাশি, তারা অত্যন্ত ধূর্ত এবং হিংস্র, তা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। সে রকম একটা দলের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে মতাদর্শের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কৌশলগত দিকটাও মাথায় রাখতে হবে বলে আমার মনে হয়।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বামেদের আদর্শ আছে। কিন্তু ষাট বা সত্তরের দশকে যে ভাবে প্রতিবাদ হত, পুরনো সেই স্টাইলে ২০১৯-এ এসে বিজেপির মতো একটি সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে লড়াই করা অসম্ভব। আমি বলব, গত কাল প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীরা কৌশলগত ভাবে ব্লান্ডার করেছে।’’