বাবুলের ছেড়ে যাওয়া ঘরে বসতে নারাজ ইন্দ্রনীল। ফাইল চিত্র।
বাবুল সুপ্রিয়র ছেড়ে যাওয়া ঘরে বসবেন না ইন্দ্রনীল সেন। সোমবার পর্যটন দফতর ফিরে পাওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে নবমহাকরণে পর্যটন দফতরে এসেছিলেন চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল। ছিলেন ঘণ্টা দেড়েক। আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করেন। পাশাপাশি তাঁদের জানিয়েছেন, পর্যটনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি যে ঘরে বসতেন, সেখানেই যেন তাঁর বসার বন্দোবস্ত করা হয়। সেই ঘরটি সাজিয়ে তোলার জন্য আধিকারিকদের এক দিন সময়ও দিয়েছেন। তার মধ্যেই তাঁর পুরনো ঘর কাজের জন্য তৈরি করতে বলা হয়েছে।
নবমহাকরণের চার তলায় পর্যটন মন্ত্রীর দফতর। গত ১৩ মাস ধরে এই দফতরে বসেই নিজের কাজকর্ম সামলাতেন বাবুল। ইন্দ্রনীল যে ঘরে বসে পর্যটন দফতরের কাজ করতেন, সেই ঘরে না বসে ওই আবাসন থেকে গঙ্গার দৃশ্য তথা হাওড়া শহর দেখা যায়, এমন একটি ঘর নিজের জন্য পছন্দ করেছিলেন বাবুল। সেই মতো ঘরটি তৈরি হয়েছিল বাবুলের জন্য। কিন্তু মঙ্গলবার ইন্দ্রনীল দফতরে এসে নিজের পুরনো ঘরটি নতুন করে ‘রেডি’ করতে বলায় তৎপরতা শুরু হয়।
ঘটনাচক্রে, বাবুল এবং ইন্দ্রনীল, দু’জনেই পেশাদার গায়ক। দু’জনের সম্পর্ক বরাবরই ‘মধুর’ বলেই জেনে এসেছে দুই গায়কের ঘনিষ্ঠ মহল। তবে কখনওই দু’জনে সে কথা প্রকাশ্যে মেনে নেননি। তবে ঠান্ডা লড়াই যে ছিল, তা বোঝা যায় বিধানসভার অলিন্দে দু’জনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনায়। তার পরেই পর্যটন দফতর ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন বালিগঞ্জের বিধায়ক। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাবুল নিজেই সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছিলেন, তিনি আর পর্যটন দফতরে থাকতে চাইছেন না। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তাতে অসম্মতি জানাননি। আর সোমবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাবুলের কাছ থেকে নিয়ে পর্যটনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইন্দ্রনীলকে। আর দায়িত্ব ফিরে পেয়েই ফের নিজের মতো করেই পর্যটন দফতরকে সাজাতে চান বলেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী, বলছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরাই।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে জয় পান বাবুল। তার পর মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার কারণে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করা বাবুলকে মন্ত্রিসভায় যোগদান করানো নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়। ৩ অগস্ট মন্ত্রিসভার রদবদলে ৮ জন মন্ত্রীকে নতুন করে মন্ত্রিসভায় নেন মমতা। সেই পর্যায়েই তথ্য প্রযুক্তি দফতরের সঙ্গে পর্যটন পান বাবুল। ইন্দ্রনীলের হাত থেকে নিয়েই বাবুলকে এই দফতরটি দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি বিধানসভায় পর্যটন দফতরের কাজ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের বাইরে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল। বাবুল শিবিরের অভিযোগ ছিল পর্যটন নিগমের চেয়ারম্যান হিসেবে বহু ফাইল তাঁর কাছে পাঠাচ্ছেন না ইন্দ্রনীল। যদিও, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ইন্দ্রনীলের ঘনিষ্ঠ মহল। তবে পর্যটন দফতরে বাবুল জমানা যে শেষ, মঙ্গলবার কার্যত আধিকারিকদের বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘দুরের বলাকা’র গায়ক।
নবমহাকরণের চার তলাতেই আরও একজন মন্ত্রীর দফতর বদল হয়েছে। সমবায় দফতর থেকে অরূপ রায়কে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে পাঠিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে। মঙ্গলবার তিনি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে অরূপের ছেড়ে যাওয়া ঘরেই আধিকারিকদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন প্রদীপ। বিদায়ী মন্ত্রীর ঘরের ‘নেমপ্লেট’ খোলা ছাড়া আর কিছু আপাতত বদল করা হয়নি বলেই সমবায় দফতর সূত্রে খবর।