Indranil Sen vs Babul Supriyo

দুই গায়ক-মন্ত্রীর কাজিয়া মুখ্যমন্ত্রীর দরজার সামনে, কাজ আটকে দিচ্ছ: বাবুল! দিদিকে গিয়ে বল: ইন্দ্রনীল!

দু’জনেই মন্ত্রী। দু’জনেই গায়ক। তবে ফারাক রয়েছে। দফতরের কাজ নিয়েও যে মতের ফারাক রয়েছে তা স্পষ্ট হল সোমবার। তৃণমূলে তুলনায় ‘প্রবীণ’ ইন্দ্রনীলের সঙ্গে কাজিয়া দেখা গেল ‘নবীন’ বাবুলের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ১৯:২২
Share:

(বাঁ দিকে) বাবুল সুপ্রিয়। ইন্দ্রনীল সেন (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

বিধাসনভার অধিবেশন শেষ হয়ে গিয়েছে। বিরোধী বিধায়করা প্রায় সকলেই চলে গিয়েছেন। এর পরে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। তা-ও শেষ হয়ে গিয়েছে। বিধানসভার অলিন্দ মোটামুটি ফাঁকা। সেই সময়েই দেখা গেল পাশাপাশি হাঁটছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। দু’জনেই গায়ক। কারিগরি শিক্ষা এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন আর পর্যটন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। দুই দফতরের মধ্যে মিল না থাকলেও ইন্দ্রনীল আবার বাবুলের দফতরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারপার্সন। কিছু দিন আগেই নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে ওই পদ ইন্দ্রনীলকে দিয়েছেন মমতা।

Advertisement

সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের ঠিক সামনেই সেই দুই মন্ত্রী খানিকটা প্রকাশ্যেই বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লেন। পুরোটা বোঝা না গেলেও বাবুলকে খানিক উচ্চস্বরেই বলতে শোনা গেল, ‘‘তুমি আমার দফতরের কাজ আটকাচ্ছ কেন? তুমি এ ভাবে সরকারি কাজ আটকে রাখতে পারো না! তুমি ফাইল পাঠানো বন্ধ করে দিলে কাজ হবে কী করে!’’ এর পরে ইন্দ্রনীলও আশপাশের লোকেরা শুনতে পাবেন, গলার স্বর তেমন সুরে বেঁধেই বলেন, ‘‘তোর যা বলার তুই সেটা দিদিকে গিয়ে বল!’’ পাল্টা বাবুল বলেন, ‘‘সে আমি তো বলেইছি। যদি দরকার মনে করি আবার বলব। কিন্তু তুমি এ ভাবে আমার দফতরের কাজ আটকাতে পারো না।’’

ওই প্রকাশ্য বাদানুবাদ আরও চললে তা যে আরও ছড়াবে, সম্ভবত সেটা বুঝতে পেরেই ইন্দ্রনীল বাবুলকে বলেন, ‘‘এখানে এ ভাবে কথা বলিস না তুই। তোর দফতরের কাজ কেন আটকাতে যাব আমি! বললাম তো, তোর কিছু বলার থাকলে দিদিকে গিয়ে বল।’’

Advertisement

বিবাদ প্রকাশ্যে আর এগোয়নি। তবে বাবুল যে আবার দিদির (মুখ্যমন্ত্রী) কাছে নালিশ করতে পারেন, সেটা বুঝিয়ে দেন। বস্তুত, তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রের খবর, বাবুল ইতিমধ্যেই দলের উচ্চতম মহলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।

ইন্দ্রনীল ও বাবুল দু’জনেই বিনোদনের জগৎ থেকে রাজনীতিতে এসেছেন। তবে তৃণমূলে বাবুলের চেয়ে তুলনায় ‘প্রবীণ’ ইন্দ্রনীল। যদিও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল মমতা মন্ত্রিসভায় ইন্দ্রনীলের তুলনায় ‘সিনিয়র’। কারণ, তিনি ‘পূর্ণমন্ত্রী’। যদিও বয়সে ‘ছোট’ বাবুলকে বরাবরই ‘তুই’ সম্বোধন করেন ইন্দ্রনীল। এমন নয় যে, বাদানুবাদের তোড়ে ‘তুই’ বেরিয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘ওঁদের মধ্যে কী নিয়ে কথা হচ্ছিল জানি না। তবে বাবুলকে অসম্মান করার জন্য ইন্দ্রনীল তুইতোকারি করেছে এমনটা নয়। এমনিতেই ওরা এই ভাবেই একে অপরকে সম্বোধন করে। তুই এবং তুমি।’’

সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে পারস্পরিক কিছু সম্পর্ক থাকে। তথ্য ও সম্প্রচার এবং পর্যটন দফতরের মধ্যে পারস্পরিক কাজের সম্পর্ক থাকে। আবার ইন্দ্রনীল কিছু দিন আগেই পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হয়েছেন। সূত্রের খবর, পর্যটন মন্ত্রী বাবুলের কাছে বিভাগীয় ফাইল আসছিল না। পর্যটন দফতরের ডেপুটি সচিব পর্যায়েই ফাইল ঘোরাফেরা করছিল। একটি সূত্রের দাবি, ওই বিষয়টি সম্পর্কে আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করে রেখেছিলেন ইন্দ্রনীল। সে কারণেই তিনি বাবুলকে সাফ বলেছেন, ‘‘দিদিকে গিয়ে বল!’’

তবে ইন্দ্রনীলকে যখন মুখ্যমন্ত্রী পর্যটন নিগমের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করেন, তখন বাবুল খুশিই হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়াও বিরূপ ছিল না। তবে অতীতেও বাবুল-ইন্দ্রনীল সম্পর্ক খুব ‘মসৃণ’ থাকেনি বলেই একাধিক সূত্রের দাবি। যদিও সে খবরের প্রকাশ্যে কোনও সমর্থন মেলেনি। সোমবারের বিতণ্ডা নিয়ে ইন্দ্রনীল এবং বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ইন্দ্রনীল ফোন ধরেননি। বাবুল শুধু বলেছেন, ‘‘যা হয়েছে, তা সকলের সামনেই হয়েছে। এর বেশি আমি এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement