প্রতীকী ছবি।
স্টেশনগুলি ঝা চকচকে করার কথা জানিয়েছে রেল। তবে সেই স্টেশনে পা ফেলতে হলে গুণতে হবে ট্যাঁকের কড়ি! রেলের সিদ্ধান্ত, স্টেশনগুলিকে উন্নত করার খরচ নেওয়া হবে যাত্রীদের কাছ থেকেই। তাই টিকিটের উপরে চাপানো হবে স্টেশন ডেভেলপমেন্ট ফি। মন্ত্রকের ওই সিদ্ধান্তের কথা গত ৩১ ডিসেম্বর দেশের সব ক’টি জ়োনাল রেলওয়েকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন রেল বোর্ডের প্যাসেঞ্জার মার্কেটিং বিভাগের অধিকর্তা বিপুল সিঙ্ঘল।
রেল বোর্ড সূত্রের খবর, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে স্টেশন ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের উদ্যোগে সারা দেশে যে-সব স্টেশনে ভোল বদলের কাজ হয়েছে মূলত সেখানে ওঠানামার ক্ষেত্রেই দূরপাল্লার এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেনের যাত্রীদের টিকিটে ওই খরচের বোঝা চাপবে। দূরপাল্লার বাতানুকূল শ্রেণির যাত্রীদের টিকিটপিছু ৫০ টাকা ফি দিতে হবে। সংরক্ষিত শ্রেণির যাত্রীদের ২৫ টাকা, প্যাসেঞ্জার এবং ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনের অসংরক্ষিত শ্রেণিতে ওই খরচ পড়বে ১০ টাকা। এই ফি-র উপরে যোগ করা হবে জিএসটিও।
রেলের বক্তব্য, কোনও যাত্রী যদি ঝা চকচকে স্টেশন থেকে ট্রেনে চাপেন তা হলে তাঁকে ১০০ শতাংশ ফি দিতে হবে কিন্তু যদি তিনি সাধারণ স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে ঝকঝকে স্টেশনে নামেন তা হলে তাঁকে অর্ধেক ফি দিতে হবে। যদি কোনও যাত্রীর ঝকঝকে স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে ঝকঝকে স্টেশনে নামেন তা হলে তাঁকে দেড় গুণ ফি দিতে হবে। সাধারণ স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে ঝকঝকে স্টেশনে নেমে ট্রেন বদল করলেও তাঁকে দেড় গুণ ফি দিতে হবে। যে-সব টিকিটে রেল ভর্তুকি দেয়, সেখানেও এই অতিরিক্ত ফি যোগ হবে।
দেশে অবশ্য এমন ঝকঝকে স্টেশন সাকুল্যে দু’টি, গুজরাতের গান্ধীনগর এবং অন্যটি ভোপালের হাবিবগঞ্জ (অধুনা রানি কমলাপতি)। তবে রেলের দাবি, আরও কয়েকটি স্টেশনকে এমন ঝা চকচকে করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে এ রাজ্যের আসানসোল স্টেশনও রয়েছে।
রেল সূত্রের দাবি, স্টেশনকে ঝা চকচকে করার এই পরিকল্পনাই আপাতত বিশ বাঁও জলে চলে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, স্টেশন উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকেই গুটিয়ে ফেলার সুপারিশ করেছে রেলের বিশেষ কমিটি। গান্ধীনগর এবং হাবিবগঞ্জ স্টেশনকে মডেল হিসেবে তুলে ধরা সত্ত্বেও গত তিন বছরে বহু সংস্থাই স্টেশনে বিপুল বিনিয়োগ করতে রাজি হয়নি। উল্টে দু’টি স্টেশনকে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে প্রচুর খরচ হয়েছে। সেই খরচের একাংশ তুলতেই যাত্রীদের টিকিটের উপরে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, ‘‘বেসরকারি সংস্থাকে স্টেশনের পরিসর ভাড়া দিয়ে রেল আয় করার পরে এ ভাবে যাত্রীদের ঘাড়ে বোঝা চাপানোর অর্থ কী? ওই টাকা কি বেসরকারি সংস্থা পাবে?’’ যদিও রেল কর্তাদের দাবি, ভবিষ্যতে আরও নতুন স্টেশনে উন্নয়নের কাজ করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করাও ওই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। এই বিষয়টিকে যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে এক হিসেবে দেখা উচিত নয়।