ফাইল চিত্র।
কাশ্মীরের আপেল বাগানে কাজে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির পাঁচ শ্রমিক। এর আগে রাজস্থানে গিয়ে মালদহের যুবক আফরাজুলকে খুন হতে হয়েছিল। কেরল-কর্নাটকে বাংলার শ্রমিকদের অস্থায়ী বস্তিতে পর পর ধরা পড়েছে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গিরা। এমন পরিস্থিতিতে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নবান্ন। তাঁদের করণীয় সম্পর্কে কিছু নির্দেশিকা তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে।
নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, কোন জেলা থেকে কত শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে যাচ্ছেন, তার কোনও প্রামাণ্য তথ্য সরকারের কাছে নেই। শুধু গত বছর ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় মুর্শিদাবাদের তৎকালীন জেলাশাসক পি উলগানাথন বুথ লেভেল অফিসারদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-র এপ্রিলে এই জেলার ১ লক্ষ ১৪ হাজার শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে ছিলেন। বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক উলগানাথন বলেন, ‘‘ওই শ্রমিকদের চিঠি পাঠিয়ে ভোট দিতে আসার অনুরোধ করা হয়েছিল।’’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘কেরলে বন্যার সময়ে এখানকার শ্রমিকদের খোঁজ করতে গিয়ে ওই তথ্য সহায়ক হয়েছিল।’’
মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুরের বহু শ্রমিকও ভিন্ রাজ্যে যান বলে জানাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা। সংখ্যাটা ১০ লাখের আশপাশে। কুলগামের ঘটনার পরে এই শ্রমিকদের নিয়েই চিন্তিত নবান্ন। তবে এঁদের ভিন্ রাজ্যে যেতে নিষেধ করার কথা ভাবা হচ্ছে না। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া যাবে না, এ কথা বলা যায় না। তা হলে প্রমাণ হবে সামগ্রিক ভাবে দেশেই জীবনের সুরক্ষা নেই।’’ রাজ্যে কাজ দিতে না পারলে কী ভাবে শ্রমিকদের ভিন্ রাজ্যে যাওয়া আটকানো যাবে, এই প্রশ্নও উঠেছে। বস্তুত মুর্শিদাবাদের সমীক্ষা বলছে, যে সব ব্লক তুলনায় গরিব, যেমন ডোমকল, রানিনগর, ভগবানগোলা, লালগোলা, নবগ্রাম, সেখান থেকেই বেশি শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে যান। ফরাক্কা বা সাগরদিঘির মতো আর্থিক ভাবে উন্নত ব্লকে সেই প্রবণতা কম।
নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদ ও মালদহের শ্রমিকেরা আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে যেতেন। এখন কেরল, তামিলনাডু, কর্নাটকেও হাজার হাজার শ্রমিক যাচ্ছেন। দুই মেদিনীপুর থেকে শ্রমিকেরা যান মূলত সোনার ও রান্নার কাজে। এঁদের ভিন্ রাজ্যে পাঠাতে জেলাগুলিতে কয়েক হাজার সংস্থাও চলছে। যাদের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। কাশ্মীরের ঘটনার পরে ওই সংস্থাগুলির উপর নজরদারি এবং ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার আগে শ্রমিকদের কিছু করণীয় ও বিপদ এড়ানোর পরামর্শ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।