বীরসিংহ গ্রাম। ফাইল চিত্র।
দু’শো বছরেও ছোঁয়া যায়নি একশো ভাগের লক্ষ্যমাত্রা। বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা, বাংলা ভাষার প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামে তাঁর জন্মের দু’শো বছর পরেও পুরোপুরি ঘোচেনি নিরক্ষরতার অন্ধকার।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার সাক্ষরতার হারের তুলনায় বীরসিংহ এগিয়ে। তবে তা একশো শতাংশ ছুঁতে পারেনি। জেলায় সাক্ষরতার হার যেখানে ৮১ শতাংশ, সেখানে বীরসিংহে সাক্ষরতার হার ৯৪ শতাংশ। বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উদ্যাপনে যোগ দিতে আজ, মঙ্গলবার বীরসিংহে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে বিঁধছে বীরসিংহের ৬ শতাংশ নিরক্ষরতার পরিসংখ্যান। প্রশাসনের একাধিক কর্তাব্যক্তি মানছেন, বীরসিংহ পূর্ণ সাক্ষর হলে ভাল হত। বিদ্যাসাগরের জন্মের দু’শো বছর পরেও এই অবস্থা কাম্য নয়।
জেলার শিক্ষা মহলের একাংশ মনে করছেন, সাক্ষরতা কর্মসূচি শ্লথ হয়ে যাওয়াতেই একশো শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যায়নি। বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির জেলা সম্পাদক প্রভাত ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘বেশিরভাগ সাক্ষরতা কেন্দ্র বন্ধ। তাই সাক্ষরতার হার বাড়েনি।’’
অবিভক্ত মেদিনীপুরে সাক্ষরতা অভিযান শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সাল নাগাদ। বিদ্যাসাগরের জেলা মেদিনীপুর থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছিল সাক্ষরতা কেন্দ্র। প্রাথমিক স্কুলের দরজায় পা না দেওয়া ১৪ বছরের বেশি বয়সি ছেলেমেয়ে ও বয়স্ক পুরুষ-মহিলাদের বাছাই করে সাক্ষরতা কেন্দ্রে পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছিল সরকারি উদ্যোগে। পড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের। গ্রাম সংসদে তৈরি হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র জনচেতনা কেন্দ্র। সাক্ষরতা অভিযানের হাত ধরে জেলায় সাক্ষরতার গড় হারও বেড়েছিল।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলছেন, ‘‘আমি অনেকবার বীরসিংহে গিয়েছি। আমাদের সময় বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা হত। তখনই তো সাক্ষরতার হার ৯৪ শতাংশ ছুঁয়েছিল। তার পরে হার যদি না বেড়ে থাকে তবে তা দুর্ভাগ্যজনক।’’
বস্তুত, সাক্ষরতা অভিযানে পরে ভাটা আসে। বেশিরভাগ কেন্দ্রই এখন বন্ধ। তবে বীরসিংহ গ্রাম তথা গোটা এলাকায় স্কুলের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বীরসিংহ গ্রাম তো বটেই, বীরসিংহ পঞ্চায়েত এলাকাতেই বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুল, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, মাধ্যমিক স্কুল, হাইস্কুল আছে। রয়েছে আইটিআই-ও।
এত সবের পরেও নিরক্ষরতার অন্ধকার ঘোচেনি। বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতির জেলা সম্পাদক প্রভাত মানছেন, ‘‘মেদিনীপুর শিক্ষায় অগ্রণী, তবে এখনও সাক্ষরতা কর্মসূচির প্রয়োজন রয়েছে। ফের উদ্যোগী না হলে বিদ্যাসাগরের গ্রামেও পুরোপুরি নিরক্ষরতা দূরীকরণ মুশকিল।’’
এ নিয়ে জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের খোঁচা, ‘‘তৃণমূলের আমলে তো সাক্ষরতা কর্মসূচি শিকেয় উঠেছে!’’ যদিও তৃণমূল জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের আশ্বাস, ‘‘সাক্ষরতার হার আরও বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।’’