নন্দীগ্রামে এই বাড়িতেই মেলে অস্ত্র কারখানার খোঁজ। (ইনসেটে) অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থী হচ্ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। আসন্ন বিধানসভা ভোটে জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রাম তাই রাজ্য রাজনীতির চর্চার কেন্দ্র। এরই মধ্যে অন্য সূত্রে সংবাদ শিরোনামে নন্দীগ্রাম। মঙ্গলবার এখানে মিলল অস্ত্র কারখানার হদিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নন্দীগ্রামের কেন্দেমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের হোসেনপুরে স্থানীয় বাসিন্দার শেখ হাকিমের বাড়িতে ওই অস্ত্র কারখানার সন্ধান মিলেছে। বাড়ি থেকে একাধিক বন্দুকের নল এবং বন্দুক তৈরির যন্ত্রাংশ পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ বলেন, ‘‘ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ হাকিমের বাড়িতে হাজির হয় নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ বাহিনী। তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ উদ্ধার করে তারা। বাড়ি তথা ওই কারখানার মালিক হাকিম এবং তাঁর স্ত্রীকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয় চল্লিশোর্ধ্ব হাকিমকে। তিনি জমি আন্দোলনের সময় বাম সমর্থক হিসাবে পরিচিতি ছিলেন। তখন বাম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ। আন্দোলন পরবর্তী পর্যায়ে বহুদিন এলাকাছাড়া ছিলেন হাকিম। পরে ফিরে এসে নিজেকে গুণিন বলে পরিচয় দিতেন।
স্থানীয়রা জানালেন, এখন আর কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হাকিমকে যুক্ত থাকতে দেখা যেত না। তবে নিজের বাড়িতে কাউকে সে ভাবে ঢুকতে দিতেন না তিনি। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে বহিরাগতের আনাগোনা বেড়েছিল বলেও খবর।
হাকিমের বাড়ির একশো মিটারের মধ্যেই থাকেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কেন্দেমারি পঞ্চায়েতের সদস্য শেখ শাহবুদ্দিন। তাঁর স্ত্রী ওই পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান। শাহবুদ্দিনের দাবি, কয়েকদিন ধরে এলাকাবাসী তাঁকে ওই বাড়িতে বহিরাগতের আনাগোনার কথা জানিয়েছিলেন। তাই তিনি পুলিশে খবর দেন। শাহবুদ্দিনের কথায়, ‘‘সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে জানাই। পুলিশ এ দিন এসে অস্ত্রের কারখানার খোঁজ পায়। স্থানীয়দের তরফে পুলিশকে সহায়তা করা হয়েছে।’’
তৃণমূল নেতার বাড়ির এত কাছে অস্ত্র কারখানা আর তিনি তা জানতেন না, এই তত্ত্ব মানতে নারাজ বিরোধীরা। বিজেপি-র জেলা (তমলুক) সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘খেলা হবে বলে স্লোগান তুলেছে তৃণমূল। তারই প্রস্তুতি চালাচ্ছে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জেরে এখন নিজেরাই মারামারি করছে।’’ তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘তৃণমূলের এমন দৈন্যদশা হয়নি যে অস্ত্র কারখানা তৈরি করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নই তৃণমূলের হাতিয়ার।’’
এ দিনই নির্বাচনী প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে নন্দীগ্রামে এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূল সূত্রের খবর, তিনি প্রথমে হলদিয়া মহকুমা অফিসে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে খোঁজ নেন। পরে যান নন্দীগ্রাম। ভোটের আগে দলীয় নেতৃত্বের এখানে এসে থাকার জন্য ভাড়া বাড়িও ঘুরে দেখেন ফিরহাদ।