শোভন চট্টোপাধ্যায়।
শনিবার রাতে পার্সোনাল রিস্ক বন্ডে সই করে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বেরোতে চান শোভন চট্টোপাধ্যায়। হাসপাতাল থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার কথা প্রেসিডেন্সি জেলে। যেখান থেকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখান থেকে কিছু ঔপচারিকতা সারার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে গোলপার্কের বাড়িতে। আদালতের পুনরাদেশ না-পাওয়া পর্যন্ত সেখানেই তিনি ‘গৃহবন্দি’ থাকবেন। শনিবার রাতে তেমনই জানিয়েছেন শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, তার কয়েক ঘন্টা আগেই শোভন সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে ‘ষ়ড়যন্ত্র’ করে এসএসকেএম হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে। এমনই অভিযোগ করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। শনিবার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শোভন উডবার্ন ওয়ার্ডের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘‘আপনারা দেখেছেন, আমার ঘরের সামনে সিকিউরিটি রয়েছে। আমি কোথাও যাচ্ছি না। শুক্রবার থেকে আমি দেখলাম, যখন আমার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু হচ্ছে না, আমি সিস্টারদের জানিয়েছি। আমার সহকর্মীদেরও জানিয়েছি। যিনি দায়িত্বে আছেন, সেই এমএসবিপি মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানিয়েছি। আমাকে মেডিক্যাল বোর্ডের পক্ষ থেকে ডিসচার্জ করার কথা হয়েছিল। কিন্তু যাওয়ার ক্ষেত্রে যদি কাউকে ডিআরবিও দিতে হয়, আমি তা-ও দিতে রাজি। তা সত্ত্বেও আমাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’’
তাঁর অভিযোগ তা সত্ত্বেও হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছাড়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতালকে আমি অনুরোধ করব, যে কারণে আমাকে হাসপাতাল থেকে প্রপারলি ডিসচার্জ করছে না বা ডিওআরবি-কে জেল সুপার অনুমোদন করছেন না, সেটা আমায় জানানো হোক। বিভিন্ন ধরনের কারণ দেখানো হচ্ছে। যুক্তি দেখাতে গিয়ে যে কথাগুলো বলছেন, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এক্ষেত্রে নির্দেশ, উপদেশ বা অ্যাডভাইস আসছে। এই চক্রান্ত করে আমাকে দমানো যাবে না।’’
কেন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন? শোভন বলেন, ‘‘আমি সুগারের পেশেন্ট। হঠাৎ করে সাড়ে ৭টা-পৌনে ৮টা নাগাদ আমার ফ্ল্যাটে গিয়ে বেশ কয়েকজন সিবিআই আধিকারিক আমাকে গ্রেফতার করে আনেন। তার পর আমাকে কোনও খাবার দেওয়া হয়নি। কোনও ওষুধও দেওয়া হয়নি। সারাদিন ধরে ওইরকম ভাবে রাখার পর পরদিন ভোর ৩টে-সাড়ে ৩টের সময় খেতে দেওয়া হয়। আমার রোজ যে ওষুধ চলে, তাতে যদি কোনওরকম বাধা আসে, সেই সময়ে আমি অসুস্থ হতেই পারি। তাই ওইদিন আমাকে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডের ১০৬ নম্বর কেবিনে ভর্তি করানো হয়েছিল।’’
শোভন জানিয়েছেন, এখন তিনি সুস্থ হলেও তাঁকে বাড়ি ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেছেন, ‘‘অহেতুক যে অসুখের কথা বলা হচ্ছে, তা সিরোসিস। এই সিরোসিস আইডেনটিফাই করতে হাসপাতাল তো নির্দিষ্ট করে কোনও কথা তো বলবে! তার জন্য তো এন্ডোস্কোপি করতে হবে। লিভার বা কিডনির অবস্থা জানতে হবে। আমার কী কোনও এন্ডোস্কোপি হয়েছে? হাসপাতালকে জিজ্ঞাসা করুন! আমাকে সিটি স্ক্যান করার কথাও কোনও ডাক্তার বলেননি।’’
শোভন আরও বলেছেন, ‘‘স্টিং অপারেশনের বিষয়টি নিয়ে যে আইনি ব্যবস্থা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হোক। অন্য অভিযোগের বিরুদ্ধে যে আইনি পদ্ধতি রয়েছে, সেই পদ্ধতিতেই আমরা অংশগ্রহণ করছি। তার ভিত্তিতেই মহামান্য আদালত আমাদের জামিন দিয়েছেন। সেখানেই মহামান্য আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। সেই আদালত আমাদের হোম অ্যারেস্টের কথা বলেছেন। এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ নানা কারণে অন্যায়ভাবে ডিসচার্জ না করে রেখে দিয়েছে।’’