মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
তৃণমূলের তরফে চেষ্টা করা হয়েছিল, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে মহালয়ার দিন দলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যা প্রকাশের অনুষ্ঠানে সশরীরে হাজির থাকেন। দিদিরও ইচ্ছে ছিল ওই দিন নজরুল মঞ্চে যাওয়ার। কিন্তু চিকিৎসকদের নিষেধাজ্ঞার কারণে আপাতত গৃহহন্দি দশা কাটছে না মুখ্যমন্ত্রীর। বরং তা আরও বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার কালীঘাটের বাড়ি থেকে ভার্চুয়াল পুজো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানালেন, তাঁর বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে অন্তত ২৭ অক্টোবর। ওই দিন রেড রোডে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পুজো কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সশরীরে থাকবেন বলেই জানিয়েছেন মমতা।
বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ভার্চুয়াল মাধ্যমে কলকাতা ও জেলার কয়েকশো পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘এমনি আমি ঠিক আছি। পায়ে ইনফেকশন (সংক্রমণ) রয়েছে। আইভি ইঞ্জেকশন নিচ্ছি। ভাল করে হাঁটতে পারছি না। চিকিৎসকেরা বলেছেন আরও কিছু দিন হাঁটাচলা না করতে।’’ তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, শনিবার মহালয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী দলীয় মুখপত্রের উৎসব সংখ্যার উদ্বোধনে যেতে পারছেন না। তাঁর ইচ্ছা থাকলেও চিকিৎসকেরা তাঁকে সেই অনুমতি দেননি। একইসঙ্গে এ-ও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এ বার কোনও পুজোই মুখ্যমন্ত্রী সশরীরে গিয়ে উদ্বোধন করতে পারবেন না। বস্তুত, পুজো উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘এ বার তো পুজো উদ্বোধনে যেতে পারলাম না। ২৭ তারিখ কার্নিভালে দেখা হবে। আপনারা সবাই আসবেন। ওই দিন আমি বেরোব।’’ এক মাসের বেশি হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা নবান্নে যাননি। তিনি চেয়েছিলেন, পুজোর আগে একদিন বা দু’দিন হলেও নবান্নে যাবেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন। ফলে তা সম্ভব হচ্ছে না।
গত ১২ সেপ্টেম্বর স্পেন ও দুবাই সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফিরেছিলেন ২৩ সেপ্টেম্বর। মাঝে স্পেনে তাঁর পুরনো চোটের জায়গায় নতুন করে আঘাত লাগে। কলকাতায় ফেরার পরের দিন অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বর এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের চিকিৎসা হয়। তার পর থেকে তিনি বাড়িতেই রয়েছেন। মমতা জানিয়েছেন, স্পেনে আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও তিনি সেখানে চিকিৎসকদের দেখাননি। কারণ, তাতে আন্তর্জাতিক কর্মসূচি ব্যাহত হতে পারত। তাই কলকাতায় ফিরে চিকিৎসকদের দেখান। তাঁর একটি অস্ত্রোপচারও (প্রসিডিয়োর) হয়েছে বলে জানান মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেরও বিভিন্ন জেলার পুজো উদ্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, কালিম্পঙে যে পরিবারগুলি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের রাজ্য সরকারের তরফে তিন লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
‘ইউনেস্কো’ বাংলার দুর্গাপুজোকে আবহমান ঐতিহ্যের তকমা দেওয়ার পর এ বারই প্রথম পুজো। পুজো উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বার অনেক বিদেশি অতিথি আসবেন। তাঁরা কোথায়, কখন যাবেন আমরা জানি না। তবে আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। তাঁরা গেলেই শঙ্খ বাজিয়ে, উলুধ্বনিতে তাঁদের বরণ করে নেবেন।’’ পাশাপাশিই মমতার পরামর্শ, ‘‘মেয়েদের বলবেন শিশিতে গুড়ের নাড়ু বানিয়ে রাখতে। সেগুলি অতিথিদের হাতে তুলে দেবেন। ওটা আমাদের ট্র্যাডিশন।’’ প্রথম পর্বের উদ্বোধনের পর খানিক ক্ষণের বিরতি নেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর ফের ভার্চুয়াল উদ্বোধন শুরু করেন।