ছবি: সংগৃহীত।
বহু চেষ্টার পরে কারও ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে। কেউ নিরাশ হয়েছেন। ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে দুই জেলার বহু মানুষের। এর মধ্যে তেলেনিপাড়া-কাণ্ডের জেরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় হুগলির দুই মহকুমার বহু মানুষ আবেদনই করতে পারেননি।
সরকারি প্রকল্পে সাহায্য পান না, লকডাউনে বিপর্যস্ত এমন পরিবারের এক জন সদস্যকে এককালীন ১ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তার জন্য গত ২৪ মার্চ ওই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে বলা হয়েছিল ১৫ এপ্রিল থেকে আবেদন করা যাবে। ব্লক অফিস, মহকুমাশাসকের অফিস এবং পুরসভায় আবেদন করা যাবে। গত ২৭ এপ্রিল সেই কাজ শুরু হয়। কিন্তু প্রশাসনিক দফতরে ফর্ম বিলি এবং জমা নেওয়ার ভিড়ে লকডাউন বিধিভঙ্গের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় সে দিনই প্রশাসনের নির্দেশে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরে নবান্ন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনলাইনে আবেদনের নির্দেশ দেয়। গত ৪ মে থেকে ওই কাজ শুরু হয়। শুক্রবার ছিল আবেদনের শেষ দিন।
হুগলি জেলা শ্রম দফতরের সহকারী শ্রম কমিশনার কমিশনার সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানান, এ দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ৩৭ হাজার ৭২৩টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে ৩৪২৪টি আবেদন যাচাই করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে ২২২২টি আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। ২১০০ জনকে টাকা পাঠানো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।অনেকেই জানিয়েছেন, সার্ভারের সমস্যার জন্য অনলাইন আবেদন করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। মোবাইলে ওটিপি না আসায় কাজের কাজ হয়নি।
তেলেনিপাড়া-কাণ্ডের জেরে চন্দননগর এবং শ্রীরামপুর মহকুমায় গত তিন দিন ধরে প্রশাসন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। সেই কারণে এই দুই মহকুমার বহু মানুষ অনলাইনে আবেদন করার সুযোগই পাননি। উত্তরপাড়ার ভদ্রকালীর বাসিন্দা স্বাতী সিংহ গৃহশিক্ষকতা করেন। লকডাউনে পড়ানো বন্ধ। উপার্জনও নেই। তিনি জানান, ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে টাকা দেওয়ার কথা শুনে হাতে খড়কুটো পাবেন ভেবেছিলেন। পরে অনলাইনে আবেদনের জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রথম কয়েক দিন ওটিপি মেলেনি। আর, বুধবার থেকে নেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় আবেদন করার সুযোগটুকুও মেলেনি। একই পরিস্থিতি ডেকরেটর ব্যবসায়ী পল্টন দাসেরও। তিনিও একই কারণে আবেদন করে উঠতে পারেননি। এই দুই মহকুমার অনেকেই চাইছেন, আবেদনের জন্য তাঁদের বাড়তি সময় দেওয়া হোক।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া জেলায় মোট ৩৫ হাজার ২৬৭টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। ব্লক পর্যায়ে এইসব আবেদনপত্র যাচাই করে আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে শীঘ্রই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রশাসনের আধিকারিকরা মানছেন, ছাপানো আবেদনপত্র জমার সময়ে যে হিড়িক দেখা গিয়েছিল, তার নিরিখে অনলাইনে আবেদন কম।
এমনটা কেন হল?
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ছাপানো অনলাইনে আবেদন জমা নেওয়ার সময়ে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়, যেগুলি ছাপানো আবেদনপত্রের সময়ে ছিল না। তার ফলে আবেদনকারীর সংখ্যা কমে যায়। অনেকেই জানিয়েছেন, বহু কষ্টে তাঁরা আবেদন করতে পেরেছেন।
তাঁদের বক্তব্য, প্রথম দিকে অনেকে মোবাইলে নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোডই করতে পারেননি। অ্যাপ ডাউনলোড করা গেলেও প্রায়ই সার্ভার বসে যাওয়ায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। এই অসুবিধার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ।