প্রতীকী ছবি
এক ধাক্কায় ভাড়া কমল ৭০ টাকা। এবং তা পরিষেবা চালুর দিনেই।
হুগলির পর্যটন-শহর চন্দননগরকে কলকাতার সঙ্গে জলপথে যুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল চন্দননগর পুরসভার। বুধবার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হল। দুই শহরের মধ্যে চালু হল বাতানুকুল ‘ওয়াটার বাস’। মাথাপিছু যার ভাড়া ধার্য করা হয়েছিল ৩২০ টাকা। তবে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ লক্ষ্য করে এ দিনই চন্দননগর পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, আগামী সোমবার থেকে ভাড়া হবে মাথাপিছু ২৫০ টাকা। এই সিদ্ধান্তকে যাত্রীরা স্বাগত জানালেও কলকাতা যাওয়ার জন্য ক’জন আড়াইশো টাকা (যাতায়াত নিয়ে ৫০০টাকা) খরচ করতে রাজি হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।
পুরসভা জানিয়ছে, ১৫৬ আসনের জলযানে এ দিন কলকাতা গিয়েছেন ২০জন যাত্রী। সময় লেগেছে কমবেশি দেড় ঘণ্টা। আপাতত সোম, বুধ ও শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ চন্দননগরের রানিঘাট ছেড়ে মিলেনিয়াম পার্কে যাবে। বিকেল ৪টে নাগাদ মিলেনিয়াম পার্ক ছেড়ে চন্দননগরের পথে পাড়ি দেবে জলযান। এই পরিষেবা পর্যটন মানচিত্রে চন্দননগরের গুরুত্ব আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন পুরসভার আধিকারিকেরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
করোনা-পরিস্থিতির জেরে চন্দননগরের সঙ্গে কলকাতার রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কলকাতা যাওয়ার জন্য চন্দননগরবাসীর ভরসা বলতে রয়েছে কয়েকটি সরকারি সরকারি বাস। তবে সম্প্রতি ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। ওয়াটার বাস চালুর দিনই ভাড়া নিয়ে পুরসভার কাছে অসন্তোষের কথা জানান কয়েকজন যাত্রী। এর পরেই ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
পুরসভার কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘যাত্রীদের ভাড়া কমানোর আবেদনে সাড়া দিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সোমবার থেকে মাথাপিছু ২৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হবে।’’
চন্দননগরের বাসিন্দা এক যাত্রী উদয়ন বিশ্বাসের কথা, ‘‘লকডাউন-এ ট্রেন বন্ধ। সরকারি বাস এবং লঞ্চে যাত্রীদের যা ভিড় হচ্ছে, তাতে মনের মধ্যে সংক্রমণের আতঙ্ক তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ওয়াটার বাস চালু ভাল একটি পদক্ষেপ। তবে নিত্যযাত্রীদের ক্ষেত্রে এত টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। অ্যাডভেঞ্চার-যাত্রা করা যেতে পারে। এর বেশি কিছু নয়।’’
এর আগে জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে কলকাতা যাওয়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ‘বাংলাশ্রী’ চালু হয়েছিল। দিনে দু’টি গাড়ি চুঁচুড়া থেকে ছেড়ে কলকাতা যেত। ৫৬ আসনের বাসে যাত্রী হত ৪-৫ জন। কখনও-সখনও ফাঁকা বাসও যাতায়াত করত। ফলে, পরিবহণ দফতরকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। কিছুদিন পরে সেই পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়।
আগামী দিনে ওয়াটার বাস চন্দননগর থেকে কলকাতা হয়ে গঙ্গাসাগর যাবে বলে জানানো হয়েছে। তবে সেই পরিষেবা কবে শুরু হবে তা পুরসভা জানায়নি। দুই দিন এক রাতের প্যাকেজ ট্যুরের পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার।
জানা গিয়েছে, গঙ্গাসাগরে এক রাত কাটিয়ে যাত্রীরা চন্দননগর ফিরবেন ওয়াটার বাসে। খাওয়া-দাওয়া হবে জলযানেই।
জগদ্বার্ত্রী পুজোর চন্দননগরে আসেন দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক। ওয়াটার বাস চালু হওয়ায় তাঁদের সুবিধা হবে বলে জানাচ্ছেন পুরসভার কর্তারা।
পুরসভার কমিশনার বলেন, ‘‘জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক চন্দননগরে আসেন। পর্যটনের মানচিত্রে এই শহরের গুরুত্ব আরও বাড়াতে পুরসভার পক্ষ থেকে জলযান-পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন কলকাতার মিলেয়েনিয়াম ঘাট পর্যন্ত যাবে এই জলযান। লকডাউন-এর সমস্যা মিটে গেলে চন্দননগর থেকে গঙ্গাসাগর পর্য্যন্ত ওয়াটার বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’