বিলাপ: নিহত মনোরঞ্জন পাত্রের (ইনসেটে) শোকার্ত পরিজন। ছবি: মোহন দাস
পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। কিন্তু রবিবার রাত পর্যন্ত খানাকুলের হরিশচকে তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাত্রকে (৫৬) খুনের কারণ নিয়ে পুলিশের ধন্দ কাটেনি। অন্ধকারে পরিবারের লোকেরাও। তবে, ওই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার রাতে ওই
খুনের পিছনে বিজেপি জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। বিজেপি অভিযোগ মানেনি।
পুলিশ জানায়, ধৃতেরা হল চিংড়া গ্রামের বিভাস মালিক এবং হরিশচকেরই শ্যামল বাগ ও ভূপতি কোটাল। স্থাীয়দের একাংশের দাবি, প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য বিভাস তৃণমূল ছেড়ে সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দেয়। ভূপতি এক সময়ে মনোরঞ্জনের ছায়াসঙ্গী ছিল। সম্প্রতি সে এবং শ্যামলও বিজেপিতে ভিড়েছে।
এসডিপিও (আরামবাগ) কৃশানু রায় বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। খুনের কারণ জানার চেষ্টা হচ্ছে। ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী মেলেনি। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।” নিহতের স্ত্রী শিখাদেবী বলেন, “স্বামীর শত্রু আছে বলে কোনও দিন শুনিনি। ও সবাইকে ভালবাসত। তবে, গত সোমবার ওকে নাকি বিজেপির ছেলেরা স্কুল মাঠে ঘেরাও করে হুমকি দিয়েছিল! ও গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু তার ভিত্তিতেই আমরা ১৬ জনের নামে থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। স্বামী কেন খুন হল, কারা খুন করল পুলিশ দেখুক।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মনোরঞ্জনবাবু খানাকুল-২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন। হরিশচক হাইস্কুলের সভাপতি এবং সেখানকারই পার্শ্বশিক্ষকও ছিলেন তিনি। আগের দফায় তিনি পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষও হয়েছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মতো তিনি কাছেই নিজের খেতে যান। ৭টা নাগাদ পরিবারের লোকজন পড়শিদের থেকে জানতে পারেন, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মনোরঞ্জনবাবুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। প্রৌঢ়ের মাথার পিছন এবং নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। খবর যায় পুলিশে।
মনোরঞ্জনবাবুর দুই ছেলের মধ্যে বড় সুমনই প্রথমে গিয়ে বাবার দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘গিয়ে দেখি রাস্তা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান বাবা বেঁচে নেই।’’
ময়নাতদন্তের পরে রবিবার বিকেলে মনোরঞ্জনবাবুর দেহ গ্রামে ফেরে। তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে যান সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থ সাহায্যও করেন তিনি। অভিষেকও এই খুনের ঘটনায় বিজেপির দিকেই আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পিটিয়ে-কুপিয়ে মনোরঞ্জনবাবুকে খুন করা হয়েছে। একসময়ে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিজেপির ঝান্ডার তলায় আশ্রয় নিয়ে এ সব করেছে। নরেন্দ্র মোদী দিল্লিতে বসে বাংলাকে অশান্ত করছেন।’’ মনোরঞ্জনবাবুকে সজ্জন, দক্ষ সংগঠক, দলের সম্পদ জানিয়ে সাংসদের হুঁশিয়ারি, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই ঘটনার তদারকি করছেন। এ ঘটনায় যুক্ত কাউকে রেয়াত করা হবে না। আমাদের কর্মীদের তা-ও বলি সংযত হন। এ ধরনের ঘটনার যদি পুনরাবৃত্তি হয়, প্রয়োজনে ১০ দিন বাদ আমি ফের আসব। কত বর হার্মাদ আর জল্লাদরা আছে তাদের দেখতে চাই। আমরা শান্তি চাই।”
বিজেপি অবশ্য প্রথম থেকেই এই খুনের পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছে। এ দিন মুকুল রায় দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের
জেরে ওই প্রৌঢ় খুন হন। অথচ,
বেছে বেছে বিজেপির লোকেদের ধরা হচ্ছে। বিজেপি খুনের রাজনীতি বিশ্বাস করে না।’’
হরিশচকে মনোরঞ্জনবাবুদের দোতলা পাকা বাড়ি। তাঁর ভাইও সেখানে সপরিবারে থাকেন। মনোরঞ্জনবাবুর বড় ছেলে সুমন গ্রামেই জল সরবরাহ প্রকল্পের পাম্প অপারেটরের কাজ করেন। ছোট ছেলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। প্রৌঢ় যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, সেই স্কুলের শিক্ষক জাহির আব্বাস বলেন, “স্কুলটির উন্নয়ন এবং পঠনপাঠনে তাঁর বিশেষ অবদান আছে। ভাল মানুষটিকে এ ভাবে চলে যেতে হবে কল্পনাও করা যাচ্ছে না।” দলীয় নেতা খুনের প্রতিবাদে আজ, েসামবার দলের জেলা নেতা দিলীপ যাদবের নেতৃত্বে খানাকুলের রাজহাটিতে মিছিল করবে তৃণমূল।