প্রতীকী ছবি।
ময়নাতদন্তের জন্য দীর্ঘদিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। গত ৯ মাস ধরে আবার শব-ব্যবচ্ছেদ করার কর্মী অবসর নিয়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল মর্গে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪টি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হচ্ছে। অনভিজ্ঞদের দিয়ে ময়নাতদন্তের অভিযোগ তুলে হামেশাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন অস্বাভাবিকভাবে মৃত পরিবারের সদস্যরা। অসন্তোষ আছে পুলিশেরও।
মহকুমা হাসপাতাল এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে প্রায় ২০ বছর ধরে ময়নাতদন্তের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে অন্য বিভাগের চিকিৎসকদের দিয়েই ময়নাতদন্ত করাতে হচ্ছে পুলিশকে। এতে অনেক সময়েই রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সংশ্লিষ্ট মৃতের পরিবারের লোকরা। তার জেরে ময়নাতদন্তে অনভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও জটিল মৃত্যুর ঘটনাগুলির ময়নাতদন্ত করতে অস্বীকার করেন। ফলে দেহ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে স্থানান্তরিত করতে হয়। সব মিলিয়ে হয়রানি এবং আর্থিক বোঝা বহন করতে হয় পুলিশ প্রশাসনকে। যেমন, আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত না হলে মৃতদেহ বর্ধমানে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে ময়নাতদন্তের পরে ফের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের উপরই বর্তায়।
গত জানুয়ারি মাসে মর্গের শব-ব্যবচ্ছেদ করার কর্মী অবসর নেবার পর সেই কাজটা হাতেকলমে করেন একজন ‘সুইপার’ পদের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী। ওই কর্মী আবার অবসর নেওয়া ডোমের ভাই। তাঁর দাবি, শব ব্যবচ্ছেদের কাজটা বংশানুক্রমে তিনি জানেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খাতায় কলমে ডোমের পদ ফাঁকা রাখা আছে। ডোম পদে লোক না পাওয়া অবধি স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিয়ে আপাতত দিন মজুরির ভিত্তিতে ডোমের কাজ করানো হচ্ছে। ময়নাতদন্ত আরও একটি অভিযোগ, ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার আগে যথেচ্ছ টাকার দাবি করা হয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মী।
এ দিকে আরামবাগ মহকুমার চারটি থানা ছাড়াও সংলগ্ন তারকেশ্বর, বর্ধমানের মাধবডিহি, বাঁকুড়ার কোতলপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার বিভিন্ন গ্রামে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলে, ময়নাতদন্তের জন্যে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালেই পাঠানো হয়। বিষ পান, গলায় দড়ি-সহ নানা দুর্ঘটনা ইত্যাদি ঘটনায় আশঙ্কজনক রোগীদের চটজলদি আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাচলাকালীন সেই সব রোগীর মৃত্যু হলে ময়নাতদন্তের দায় বর্তায় আরামবাগ পুলিশের।
মহকুমা হাসপাতালে মর্গের এই সংকট নিয়ে হাসপাতালের সুপার শিশিরকুমার নস্কর বলেন, “মর্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং শব-ব্যবচ্ছেদ করার কর্মী না থাকায় সমস্যা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” মর্গে মৃতের পরিবারের কাছ থেকে টাকার দাবি করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”