অস্থায়ী কর্মীদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার ভুতুড়ে কর্মী নিয়ে সরব হওয়ায় এক পুরকর্মীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে সামিল হয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন হুগলির চুঁচুড়া পুরসভার কয়েক শো অস্থায়ী কর্মী। গোটা ঘটনার পিছনে আবার রাজনৈতিক মদত রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
গত ২৬ ডিসেম্বর অস্থায়ী শ্রমিকদের একটি সভা ছিল চুঁচুড়ায়। সেই সভায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক পুরকর্মী অভিযোগ করেন, ‘চুঁচুড়া আরোগ্য’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় এমন কয়েক শো কর্মী রয়েছেন, যাঁরা ওই সংস্থার হয়ে কাজ করলেও বেতন নেন পুরসভা থেকে। করোনার সময়েও পৌরসভার গেটে আরোগ্যের পোসাক পরে তাঁরা কাজ করতেন।
এই অভিযোগ তোলার পরেই নাকি চুঁচুড়া আরোগ্যের কর্মীরা সৌরভের খোঁজে প্রথমে পুরসভা যান। সেখানে না পেয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা এবং পরিবারের লোকেদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এই হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার পুরসভার অস্থায়ী কর্মীরা পুরসভা থেকে চুঁচুড়া কারবালা মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন। বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, চুঁচুড়া আরোগ্যর সদস্যদের ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে তাঁরা কাজ বন্ধ রাখবেন। কর্মীদের আরও দাবি, পৌরসভায় এমন আরও বহু ভুতুড়ে কর্মী রয়েছেন, যাঁরা নামেই পুরসভায় কাজ করেন। আসলে তাঁরা অন্য জায়গায় কাজ করলেও পুরসভা থেকে বেতন ঠিকই পেয়ে যান। পুরসভার প্রতিটি বিভাগেই এমন অবস্থা।
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে চুঁচুড়া আরোগ্যের সভাপতি সুজনবন্ধু ঘোষ বলেন “এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এখানে সরকারি বেসরকারি চাকুরিজীবী বহু মানুষ জড়িত। সবাই স্বেচ্ছাশ্রম দেন। নিজেদের অবসর সময়ে এখানে কাজ করেন। তবে কী কারণে সৌরভের বাড়িতে হামলা, তা আমার জানা নেই। কিন্তু আমরা চাই কর্মচারীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাক। তবে এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই বলেই আমার মনে হয়। কারণ এটি একটি অরাজনৈতিক সংস্থা।”
যদিও পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, চুঁচুড়া আরোগ্যের অন্যতম কর্ণধার, ইন্দ্রজিৎ দত্ত, আবার শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী বলে পরিচিত। মেদিনীপুরে শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদানের দিন তাঁর সেই তালিকায় নাম ছিল। তবে ইন্দ্রজিৎ দাবি করেছেন, তিনি এখনও বিজেপিতে যোগ দেননি। তবে তাঁর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার খবর ছড়ানোর পরই চুঁচুড়া আরোগ্য নিয়ে নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কারণ ভুতুড়ে কর্মী থেকে থাকলে সে তো এর আগেও ছিল। এত দিন সমস্যা হয়নি কেন?
চুঁচুড়া পুরসভার প্রশাসক গৌরিকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “চুঁচুড়া আরোগ্যের কর্মী অথচ পুরসভা থেকে মাইনে পান এমনটা ঠিক নয়। হয় তো কেউ পুরসভাতে চাকরির পাশাপাশি ওই সংস্থার সদস্য। সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’’ তবে এমন ভুতুড়ে কর্মী রয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন খবর পাচ্ছি। আমরা তদন্ত করছি বিভিন্ন জায়গায় ছাপা মারছি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’