প্রতীকী ছবি।
করোনা-আবহে বন্ধ যাত্রাপালা। পেটে টান পড়েছে দুঃস্থ যাত্রাশিল্পী আশিস মোহন্তর। হার্নিয়ায় কষ্ট পাচ্ছিলেন স্ত্রী অর্চনা। এই অবস্থায় কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না গোঘাটের খাটুল গ্রামের আশিস। সাহায্যের আশায় তিনি গিয়েছিলেন গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের কাছে। তাঁর জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন বিধায়ক। তারপর মঙ্গলবার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার হয় একটি নার্সিংহোমে। স্বস্তি আসে তাঁর পরিবারে।
করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকে বায়না পাচ্ছে না যাত্রাদলগুলি। ফলে। কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে দুঃস্থ শিল্পীদের। দিনমজুরি করে কোনওরকমে সংসার চলছে আশিসের। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রী হার্নিয়ায় খুব কষ্ট পাচ্ছিল। হাসপাতালে গেলে কবে অস্ত্রোপচার হবে তার ঠিক ছিল না। নার্সিংহোমের চিকিৎসা করানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিধায়ককে বলতে তিনি জেলাশাসকের দফতরে পাঠিয়ে দেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছি। মঙ্গলবার তাঁর অস্ত্রোপচার হয় আরামবাগের বেসরকারি একটি হাসপাতালে।
মানস বলেন, “ওঁরা আবেদন করেছিলেন ডিসেম্বরের গোড়ায়। কার্ড পেতে দেরি হচ্ছিল। আশিসের স্ত্রীর অস্ত্রোপচার জরুরি ছিল। এ কথা জানতে পেরে ওঁকে জেলার স্থায়ী কেন্দ্রে পাঠাই। সেখান থেকে হাতে হাতে কার্ড পান তাঁরা।”
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া চালু হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু বহু মানুয তা পাননি। গ্রামেগ্রামে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি নিয়ে সরকার দ্রুত সেই কার্ড মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। সরকারের এই কর্মসূচি প্রশংসা কুড়োলেও প্রশ্ন উঠছে, প্রকল্প চালু হওয়ার এত পরে কেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আশিসের বক্তব্য, “দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগী না হওয়ায় সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা এতদিন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। সরকারি কর্মীদেরও আন্তরিকতার অভাবও ছিল।”
এই উপলব্ধি শুধু আশিসের নয়। আরামবাগ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর কলোনির মালা মাজি, অন্ন মাজি, পূর্ণিমা মাজিদের অভিযোগ, “কেউ ভিক্ষা করে বা কেউ হোটেলে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। সারাবছর অপুষ্টি, জ্বর-সহ নানা অসুখে জেরবার হয়েছি। ২০১৬ সালে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হলেও এতদিন বঞ্চিত ছিলাম। ভোট আসতে তবেই সরকারের টনক নড়ল।” খানাকুলের ঘোষপুরের তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এতদিন অধিকাংশ প্রকল্পগুলি প্রচারের আলোয় আসেনি।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) প্রলয় মজুমদার বলেন, “আমরা জরুরি ভিত্তিতে হাতেহাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিচ্ছি। সকলে যাতে দ্রুত সেই কার্ড পান, তার পদক্ষেপ করা হয়েছে।”