কলকাতা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা

অ্যাম্বুল্যান্স নেই, রোগী যায় ডুলি-পালকিতে

ডুলি, পালকি জোগাড় না হলে নিদেনপক্ষে কাঠের পাটাতন। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থার রোগীদের শহরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভরসা অ্যাম্বুল্যান্স নয়, এ সব বাহনই।

Advertisement

নুরুল আবসার

জয়পুর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২২
Share:

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে ডুলি-পালকিই যখন অ্যাম্বুল্যান্স।

ডুলি, পালকি জোগাড় না হলে নিদেনপক্ষে কাঠের পাটাতন।

Advertisement

উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থার রোগীদের শহরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভরসা অ্যাম্বুল্যান্স নয়, এ সব বাহনই।

না, কোনও অজ পাড়া-গাঁয়ের ছবি নয়। কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে হাওড়ার দুটি পঞ্চায়েত এলাকায় দেখা মিলবে এমনই ছবির। ভাটোরা আর ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান, এই দুটি পঞ্চায়েত এ‌লাকার জনসংখ্যা কমবেশি ৫০ হাজার। রূপনারায়ণ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদী দিয়ে ঘেরা এই দুই পঞ্চায়েত এলাকা স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি বললেই চলে। কুলিয়াঘাটে পাকা সেতুর শিলান্যাস হয় ২০০৬ সালে। সেতুর একটি ইটও গাঁথা হয়নি এখনও। পাকা সেতুর জন্য চিৎকার করে গ্রামবাসীদের কপালে জুটেছে বাঁশের সাঁকো। ভরা বর্ষায় জীবন হাতে নিয়েই সাঁকো পার করেন গ্রামবাসী। দুই পঞ্চায়েতের বুক চিরে চলে যাওয়া প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তার বেশিরভাগটাই কাঁচা। কিছুটা অংশে ইট পাতা । কিছুটা অংশ ঢালাই করা। রাস্তার উন্নয়ন বলতে ওইটুকুই।

Advertisement

দুই পঞ্চায়েতের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল?

ভাটোরা-ঘোড়াবেড়িয়া চিতনানে সুব্রত জানার তোলা ছবি।

অনুন্নয়নের ছায়ায় তা আজও ঢাকা। দুই পঞ্চায়েত এলাকার সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিচালিত হয় ভাটোরা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে। বছর দশেক আগে সিদ্ধান্ত হয়, এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০টি শয্যার ব্যবস্থা করে অন্তর্বিভাগ চালু করা হবে। সেইমত তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে যায় নতুন ভবন। পাতা হয় শয্যা। কিন্তু মেলেনি চিকিৎসক। অন্তর্বিভাগ আর চালুই করা যায়নি। এক সময় শয্যাও তুলে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনের নীচে গরু চরে। গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজনই চিকিৎসক। একজন ফার্মাসিস্ট। একজন নার্স। দুজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। এভাবেই চলে বহির্বিভাগ। চিকিৎসক আসেন মাত্র তিনদিন। বাকি দিনগুলিতে নার্স, ফার্মাসিস্ট আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর হাতেই রোগীর জীবন। যদিও এতে রোগীর ভিড়ের কমতি নেই। বিভাস মলিক, সন্ধ্যা মালিক বলেন, ‘‘কী করব, এ ছাড়া তো গতি নেই। চিকিৎসক না থাকায় খুব অসুবিধায় পড়ি আমরা।’’

স্বাস্থকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল বাইরে রাখা আছে পালকি। কীসের জন্য? বাসিন্দারা জানান, এমনিতে এটা বিয়েবাড়িতে ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে এটাই কাজে লাগে। কারণ অ্যাম্বুল্যান্স কোথায় পাব! তাই পালকিতে চাপিয়ে রোগীকে কুলিয়াঘাটে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ধরে রোগীদের নিয়ে যাওয়া হয় বাগনান বা উলুবেড়িয়ায়।

কী বলছে স্বাস্থ্য দফতর?

তাদের বক্তব্য, চারপাশে নদী থাকায় এলাকাটি দুর্গম। কোনও চিকিৎসক এখানে আসতে চান না। তাই অন্তর্বিভাগ চালু করা যায়নি। তবে তাঁদের যুক্তি, ঘাটতি মেটানোর জন্য নামানো হয়েছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। খড়িগড়িয়ার এই সংস্থার হাত ধরে দক্ষিণ ভাটোরার বিভিন্ন জায়গায় সপ্তাহে ছয় দিন আয়োজন করা হচ্ছে স্বাস্থ্য শিবির। সেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে সঙ্গে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা-সহ নানা ধরনের সহায়তা দেওয়া হয় রোগীদের। অবস্থা খারাপ হলে রোগীকে ডুলিতে চাপিয়ে স্বাস্থ্যশিবিরে আনা হয়। ভ্যানরিকশায় পৌঁছে দেওয়া হয় কুলিয়াঘাটে। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে বাগনান বা উলুবেড়িয়ার হাসপাতালে।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে শক্তিপদ দলুই বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৭০০টি পরিবারকে দেখভালের। সেইমত আমরা পরিষেবা দিয়ে থাকি। কখনও কখনও অন্য গ্রামেও যেতে হয়।’’

চিকিৎসকের অভাব স্বীকার করেছেন আমতা ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শর্মিলা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যভবনে অনেক তদ্বির করে তবে দু’জন চিকিৎসক মিলেছে। তবে কাজে যোগ দিয়েছেন একজন। তাঁকে সপ্তাহে তিন দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্র সামলাতে হয়। বাকি তিনদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিবির করেন।’’

স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, জেলার এই দ্বীপ এলাকার মানুষের কাছে ভরসা এখন এই সব স্বাস্থ্যশিবিরই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement