Coronavirus

পরিযায়ী-অশান্তি বাড়ছে দুই জেলায়

কিন্তু যে হারে দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরছেন, তাতে গোলমাল আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০৫:৫৬
Share:

গোলমাল সামলাতে পুলিশ। উলুবেড়িয়ার রাজাপুরে। ছবি: সুব্রত জানা

ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা কোথায় থাকবেন, সেই প্রশ্নে দুই জেলাতেই পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে।

Advertisement

করোনার উপসর্গহীন শ্রমিকদের গৃহ-নিভৃতবাসে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু সাধারণ মানুষের সংক্রমণের ভয় এবং তার জেরে অশান্তি অব্যাহত। শনিবার সেই অশান্তির সাক্ষী থাকল উলুবেড়িয়ার তুলসীবেড়িয়া এলাকা। দুই পাড়ার গোলমালে ইটবৃষ্টি, বোমাবাজি, ঘরবাড়ি ভাঙচুর— কিছুই বাদ রইল না। আহত হলেন চার জন। তার আগে শুক্রবার রাতে আবার খানাকুল-২ ব্লকের এক মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানকে নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি ও তাঁর পিরবারের লোকজনকে মারধরের অভিযোগ উঠল পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর বাধায় চুঁচুড়ার ভগবতীডাঙার এক পরিযায়ী শ্রমিক তাঁর মা, স্ত্রী এবং দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত পথেই কাটালেন।

সব ক্ষেত্রেই পুলিশ বা জনপ্রতিনিধিরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে হারে দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরছেন, তাতে গোলমাল আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তুলসিবেড়িয়ার সর্দারপাড়ায় সম্প্রতি মুম্বই থেকে ১১ জন শ্রমিক বাড়ি ফেরেন। কিন্তু সকলের বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকার পরিকাঠামো না-থাকায় গ্রামবাসীরাই তাঁদের মাঠের মধ্যে একটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেন। তিন দিন আগে পাশের খালপাড়ার কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিকও বাড়ি ফেরেন। সর্দারপাড়ার লোকজনের অভিযোগ, খালপাড়ার পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিভৃতবাসে না-থেকে গ্রামে যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ, সর্দাপরপাড়ার রাস্তায় বেড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে। খালপাড়ার লোকজনের পাল্টা অভিযোগ, সর্দারপাড়ার লোকজন কলে জল নিতে বাধা দিচ্ছেন।

Advertisement

শনিবার সকালে এ সব নিয়েই গোলমাল শুরু হয়। দুই পাড়ার লোকজনের মধ্যে ইটবৃষ্টি ও বোমাবাজি হয়। দুই পাড়াতেই বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়। ইটের আঘাতে দুই পাড়ার চার জন আহত হন। তাঁদের তুলসীবেড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ যায় । পুলিশ চার জনকে আটক করে। জেলার (গ্রামীণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিস মৌর্য বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে কোথায় থাকবেন, তা নিয়েই গোলমাল। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’’

শুক্রবার সন্ধ্যায় খানাকুল-২ ব্লকের পলাশপাই-১ পঞ্চায়েতের পলাশপাই গ্রামে গোলমালের কারণও একই। সে দিনই রাজস্থান থেকে স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে ফিরেছিলেন শ্রমিক চিরঞ্জিৎ মল্লিক। তাঁরা গিয়ে পাড়ার ক্লাবে ওঠেন। এতে আপত্তি জানানোয় মহিলা প্রধানকে নিগ্রহ এবং তাঁর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে ওই শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়।

প্রধান বলেন, ‘‘ক্লাবটির গায়ে ঘরবাড়ি রয়েছে। আমার নিজের বাড়িও কাছে। তাই ওঁদের ক্লাবে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, অন্যদের মতো স্কুলে গিয়ে থাকতে। ওঁরা আমাকে নিগ্রহ করল। শ্লীলতাহানি করল। আমাকে বাঁচাতে এলে স্বামী, দুই মেয়ে এবং খুড়শাশুড়িকেও মারধর করা হয়।’’ এ কথা মানেননি অভিযুক্তেরা। তাঁদের পক্ষে প্রসেনজিৎ মল্লিকের দাবি, ‘‘মারধর হয়নি। প্রধান রেগে গিয়ে আমাদের একটি মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেন। ভাইকে চড় মারেন। মেয়েদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।”

পুলিশ জানায়, দু’পক্ষই অভিযোগ জানিয়েছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্লক প্রশাসন। ওই পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁর স্ত্রী-মেয়ের জন্য গ্রাম সংলগ্ন প্রতীক্ষালয়ের দোতলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকু পেতে শুক্রবার রাতে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছে গুজরাত-ফেরত চুঁচুড়ার ভগবতীডাঙার বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসকে। পাড়া-পড়শিরা তাঁদের ঘরে থাকতে দিতে চাননি বলে অভিযোগ। প্রবল বাধায় প্রশাসনের কর্তারাও ফিরে যান। কোদালিয়া-২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের সাহায্যে শুক্রবার রাতটুকুর জন্য পরিবারটির ঠাঁই মেলে পাড়া থেকে বহু দূরের এক স্কুলে। শনিবার সকালে চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের আবাসনের একটি ঘরে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা হয়।

গোপাল বলেন, ‘‘গুজরাত থেকে ফেরার পরে আমাদের সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। সেই কাগজপত্র দেখানো সত্ত্বেও নিজের পাড়াতেই বাধা পেলাম। এমন হবে, ভাবতে পারছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement