লক্ষ্মীপুজোর আগে কেনাকাটা উলুবেড়িয়া বাজারে। ছবি: সুব্রত জানা
এক কেজি আপেল কোথাও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, কোথাও ১২০ টাকা। একটি কাঁঠালি কলা বিকোচ্ছে চার টাকায়!
আজ, রবিবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। অথচ, আনাজ এবং ফুল-ফলের দামে হাত পুড়ছে গৃহস্থের। পুজোর মরসুমে হু হু করে চড়ছে দাম। শনিবার সকালে বাজারে বেরিয়ে ব্যান্ডেলের সুতপা সান্যাল ভেবে পাচ্ছিলেন না কী করবেন! কিন্তু পুজো তো করতেই হবে। তাই সব কিছু কিনলেন কম পরিমাণে।
দুর্গাপুজো কাটতে না কাটতেই বাঙালি বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন শুরু হয়ে যায়। সকলেই সাধ্যমতো ভরে দিতে চান নৈবেদ্যর থালা। ফলমূল, মিষ্টি, নারকেলের নাড়ু, খইয়ের মুড়কি তো আছেই। সঙ্গে থাকে খিচুড়ি, লাবড়া, পাঁচ রকমের ভাজা, লুচি, সুজি। কিন্তু বাজার করতে বেরিয়ে সুতপাদেবীর মতোই সকলে দিশাহারা। ব্যান্ডেল বাজার থেকে চুঁচুড়ার খড়ুয়া বাজার বা চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জের বাজার থেকে হাওড়ার উলুবেড়িয়া— ছবিটা সর্বত্র একই।
শসা কেজিপ্রতি ৪০ টাকা। একটি পদ্ম প্রায় ৩০ টাকা। বেদানা ১৫০ টাকা কেজি। সুতপা বলেন, ‘‘যা-ই কিনতে যাচ্ছি আকাশছোঁয়া দাম। কিন্তু পুজো তো করতে হবে। তাই অল্প পরিমাণে কিনলাম।’’
ভোগের থালা সাজাতে পাঁচ রকম ভাজার আয়োজন দরকার। তাই আনাজের বাজারেও ঢুঁ মারতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কিন্তু কিনবেন কী! বেগুন, ঢেঁড়স, কুমড়ো, বরবটি, ফুলকপি—প্রায় সব আনাজেরই দাম বেড়েছে। আরামবাগে ছোট ফুলকপির দাম একলাফে ১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫-৩০ টাকা। ক্রেতারা কম পরিমাণে কেনাকাটা করায় বিপাকে পড়েছেন বিক্রেতারাও। কারণ, আনাজ, ফল তাঁদের কাছেই থেকে যাচ্ছে। ব্যান্ডেল বাজারের ফল বিক্রেতা সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর সময় থেকেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সকলের অসুবিধা হচ্ছে। সব ব্যবসাতেই মন্দার ছাপ। কতদিনে কাটবে কে জানে?’’ আরামবাগ শহরের ফল ব্যবসায়ী সুরজ রাহা বলেন, “পুজো বলে মনেই হচ্ছে না। ভিড়ও কম।’’
ডিভিসি-র ছাড়া জলে কিছুদিন আগেই প্লাবিত হয়েছিল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতার একাংশ। ফলে, বহু আনাজ নষ্ট হয়। হাওড়ার বিভিন্ন বাজারে আনাজের দর কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির পিছনে এটা একটা কারণ বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা।
শুধু, ফল বা আনাজ নয়, দুই জেলাতেই ফুলের দামও বেড়েছে। উলুবেড়িয়ায় রজনীগন্ধার দাম দু’তিন দিন আগেও ছিল ৮০ টাকা করে। শনিবার এক লাফে দাম হয়েছে প্রায় ১৫০-১৭০ টাকা। একটি পদ্ম প্রায় ৩০ টাকা। ধানের ছড়ার দাম ২৫ থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪০ টাকা। মশাট বাজারে দিনকয়েক আগে যে গাঁদার মালা ৮-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, শনিবার তা বিক্রি হয় ১৫ টাকায়। রজনীগন্ধার বড় মালা বিকিয়েছে ৫০০-৭০০ টাকা। ছোট মালা ১৫০-১৭৫ টাকায়। উলুবেড়িয়ার গৃহবধূ পূর্ণিমা বন্দ্যাপাধ্যায় বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর জন্য ফুলের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ভাল আম্রপল্লব, বেলপাতার দামও খুব বেশি। তাই ইচ্ছে থাকলেও ফুল বেশি কেনা গেল না।’’