পুরসভার অর্থসঙ্কট চরমে, হাওড়ায় ধুঁকছে উন্নয়ন

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তৃণমূল বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে নির্বাচন না করে হাওড়া পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করে রাজ্য সরকার।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০১:১৬
Share:

প্রতি বছর কোষাগারে ঘাটতি হচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। যার জেরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে হাওড়া পুরসভার সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ। টাকার অভাবে বন্ধ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বর্ষার পরে রাস্তা সারাতে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে আগাম বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট বা ডিপিআর পাঠাতে হচ্ছে অর্থের সংস্থানের জন্য। আয়ের উৎস খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পুরকর্তারা।

Advertisement

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তৃণমূল বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে নির্বাচন না করে হাওড়া পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। পরে পুরসভার কাজে গতি আনতে পুর কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে জেলার তিন মন্ত্রী, অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মীরতন শুক্ল ও প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তীকে নিয়ে প্রশাসকমণ্ডলী তৈরি করা হয়। কিন্তু তাতেও যে পুরসভার কাজে কোনও গতি আসেনি, উপরন্তু পুর কোষাগারের সঙ্কট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে, তা পুরসভা সূত্রে পাওয়া সাম্প্রতিক আয় ও ব্যয়ের হিসেব থেকেই স্পষ্ট।

পুরসভার অর্থ দফতর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বছরে খরচ যেখানে ২০০ কোটি টাকা, সেখানে আয় হচ্ছে মাত্র ১৭০ কোটি টাকা। খরচের তালিকায় রয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, একশো দিনের মজুরির টাকা, দৈনন্দিন অত্যাবশ্যক পরিষেবা বজায় রাখার খরচ-সহ প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয়। পুরসভার দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, স্থায়ী কর্মীদের বেতন দিতেই বছরে লাগছে ৩৯ কোটি টাকা। চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দিতে জন্য খরচ হচ্ছে ৩৮ কোটি টাকা। এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ৪১৯ জন অস্থায়ী কর্মীর জন্য আরও ৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ৪৪ কোটি টাকা। একশো দিনের কাজের মজুরি বাবদ লাগছে আট কোটি টাকা। জল সরবরাহ-সহ অন্যান্য অত্যাবশ্যক পরিষেবা দিতে খরচ হয় বছরে ৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া, প্রশাসনিক কাজকর্ম চালাতে ও অন্যান্য খরচ বাবদ লাগে ২৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আনুমানিক প্রায় ২০০ কোটি টাকা বছরে লাগে হাওড়া পুরসভার স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে।

Advertisement

আয়ের চিত্রটা কেমন?

পুরসভার হিসেব বলছে, লাইসেন্স ও সম্পত্তিকর থেকে রাজস্ব বাবদ আদায় ধরা হয়েছে বছরে ৪০ কোটি টাকা। বিল্ডিং দফতর ও বিজ্ঞাপন থেকে আয় আরও ৪০ কোটি। রাজ্য সরকারের থেকে প্রাপ্ত অনুদান বাবদ আয় ৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মেরেকেটে বছরে আয় ধরা হয়েছে ১৭০ কোটি টাকা। পুরকর্তাদের বক্তব্য, শুধুমাত্র পুরসভার স্বাভাবিক খরচ চালাতেই বছরে ৩০ কোটি টাকা করে ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে। ওই হিসেবে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ তো ধরাই হয়নি। অর্থাৎ, উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে বর্তমানে অর্থের কোনও সংস্থান পুরসভার নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘টাকার অভাবে পুরসভার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প (যেমন ওলাবিবিতলায় আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুল, ডুমুরজলা ইন্ডোর স্টেডিয়াম, শরৎ সদনের ভিতরে প্ল্যানেটেরিয়াম, বেজপুকুরে ভূগর্ভস্থ জলাধার, আলামোহন দাস স্পোর্টস কমপ্লেক্স) অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেই সমস্ত কাজ শেষ করতে ৭০ কোটি টাকা প্রয়োজন। রাজ্য সরকার না

দিলে পুরসভা ওই কাজ শেষ করতে পারবে না।’’

পুরসভা যে চরম অর্থসঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, তা মানছেন হাওড়া পুরসভার কমিশনার বিজিন কৃষ্ণও। তিনি বলেন, ‘‘বছরে যে ঘাটতি হচ্ছে, তা কমাতে খরচ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কর পুনর্মূল্যায়নের কাজেও গতি আনার চেষ্টা হচ্ছে। বাড়ির নকশা অনুমোদন আগের চেয়ে দ্রুততার সঙ্গে করা হবে, যাতে মানুষের সুবিধা ও রাজস্ব বৃদ্ধি, দুটোই হয়। সেই সঙ্গে হোর্ডিং ও লাইসেন্স থেকেও আয় বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement