দহন: জলের অভাবে শুরু হয়নি চাষের কাজ। চণ্ডীতলায়। ছবি: দীপঙ্কর দে।
দু’দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। চাষির মুখে হাসি নেই। আরও বৃষ্টির আশায় দিন গুনছেন চাষি। ধানের চারা বাড়ছে বীজতলায়। চাষের জমিতে বসল কই! বীজতলা বাঁচাতে একটানা অন্তত চার-পাঁচ দিন বৃষ্টি এখনই প্রয়োজন বলে চাষিদের অভিমত।
রাজ্যের প্রধান দুই ধান উৎপাদন জেলা হাওড়া এবং হুগলি। দুই জেলার চাষিরাই বলছেন, এই মরসুমের মতো শুষ্ক শ্রাবণ তাঁরা বহু বছর দেখেননি। মাসের অর্ধেক পেরোতে চলল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এ পর্যন্ত ধানের চারা জমিতে সে ভাবে রোপণ করা যায়নি। তার জেরে ইতিমধ্যেই ধান চারার বয়স ২০-২২ দিনেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে চারা যত বড় হয়, জমিতে জলের প্রয়োজন তত বাড়ে। তাই এই বৃষ্টি দেখে এখনই তাঁরা বীজতলা থেকে ধান জমিতে রোপণ করেছেন না। কারণ, বৃষ্টির ধারাবাহিকতা জরুরি। তা ছাড়া, যেটুকু বৃষ্টি এ পর্যন্ত হয়েছে, তাতে জমির মাটি ভাল করে কাদা হয়নি। এই জল মাটির গভীর পর্যন্ত ভেজাতে পারেনি। হাওড়ার কিছু এলাকায় চাষিরা বোরো মরসুমের মতো খালে স্লুইস গেটের জল ঢুকিয়ে চারা রোপণ করছেন। কিন্তু হুগলিতে তা হয়নি। এই জেলায় এ বার ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ
হওয়ার কথা।
অন্য বিপত্তিও দেখা দিয়েছে। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে কৃষিজমির বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে, সে ক্ষেত্রেও জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। চাষিরা মিনি বা গভীর নকলূপ চালিয়ে জল তুলতে পারছেন না। কিন্তু কেন?
ভূগর্ভস্থ জলস্তর হু হু করে নামায় যে মিনি এবং গভীর নলকূপের ভরসায় চাষিরা এতদিন বীজতলা বাঁচিয়ে এসেছেন, সেগুলি দ্রুত বসে যাচ্ছে। জল উঠছে না। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। মাটির জলস্তর আরও যাতে না-নামে সে জন্য দক্ষিণবঙ্গের বহু ব্লকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে কৃষিজমিতে। যাতে চাষিরা মিনি বা গভীর নলকূপ চালিয়ে মাটি থেকে আরও জল তুলে নিতে না পারেন।
আমনে সঙ্কট
• চাষের জন্য জমিতে প্রচুর জল প্রয়োজন হলেও মিলছে না।
• বহু জমির বীজতলার চারা বেড়ে গেলেও রোপণ হয়নি। অগস্ট মাসের ১৫ তারিখ
পর্যন্ত বীজতলার চারা রোপণ করা যাবে।
• ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে গিয়েছে। বাড়তি বৃষ্টি জরুরি।
• জলস্তর না-উঠলে কৃষিজমিতে জলের জন্য মিনি বা গভীর নলকূপের জল মিলবে না।
কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘এখনই প্রচুর বৃষ্টি চাই। যাতে মাটির নীচের জলস্তর ‘রিচার্জ’ (ফের জলে ভরে ওঠে) হয়। না হলে আগামী দিনে ধান গাছ বড় হওয়ার সময় যখন বেশি মাত্রায় জলের জোগান দরকার, তখন পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন জেলা থেকে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ার খবর আসছে। বহু জায়গায় মিনি বা ডিপ টিউবওয়েল কাজ করছে না।’’
ডিভিসি জল ছাড়া শুরু করলে পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে মনে করছেন জেলার এক কৃষিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টি এই রকম আরও কিছুদিন চললে চাষের পক্ষে মঙ্গল। হুগলির আরামবাগ, চুঁচুড়ায় ভাল বৃষ্টি হলেও এখনও বলাগড়ে তেমন হয়নি। তবে ডিভিসি থেকে জল ছাড়া হবে চাষের জন্য। তাতে বর্ধমান এবং হুগলির ক্ষেত্রে ধান চাষে উপকার হবে।’’
আপাতত বৃষ্টির জন্যই হাপিত্যেশ করে রয়েছেন চাষিরা। তারকেশ্বরের রামনগরের চাষি গোবিন্দ ঘোষ বলেন, ‘‘বীজতলার চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। জমি যে এখন নিড়িয়ে চারা বসিয়ে দেব, সে জন্য কাদামাটি দরকার। বহুদিন বৃষ্টি হয়নি। তাই চাষের জমির নীচের মাটি ভাল করে না ভিজলে বিপদে পড়ে যাব। এ বার আকাশের জল নেই, মাটির নীচেও জল নেই। আমরা যাব কোথায়?’’ ধনেখালির কানানদী এলাকার চাষি কাশীনাথ পাত্রের খেদ, ‘‘কয়েক দশক ধরে চাষ করছি। বীজতলায় জলের এমন আকাল দেখিনি। নদী, পুকুরে এই বর্ষাতেও তেমন জল নেই। জলের অভাবে এ বার ধানের ফলন কম হবে মনে হচ্ছে।’’
আশা-আশঙ্কায় দিন কাটছে গোবিন্দ-কাশীনথাদের।