ফিতে হাতে পুলিশ। চণ্ডীতলার মশাটের মণ্ডপে। ছবি: দীপঙ্কর দে
ফিতে আনো। মাপার ফিতে, লাল ফিতেও। দূরত্ব নির্ধারণ করে আগল দিতে হবে। বুধবার দুপুর থেকেই পুজো কমিটিগুলির হাঁকডাক শুরু হয়ে গেল দুই জেলায়।
অনেক পুজো কমিটিই এ দিন আদালতের দিকে তাকিয়েছিল। ভেবেছিল, মণ্ডপে দর্শক প্রবেশের বিষয়টি নিয়ে আদালত হয়তো কিছুটা শিথিল হবে। কিন্তু আদালত মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখার রায় বহাল রেখেছে। আর তা জানার পরেই যে সব পুজো কমিটি হাত গুটিয়ে বসেছিল, তারা ফিতে নিয়ে দূরত্ব মাপতে শুরু করে। নির্দিষ্ট দূরত্বে আগল দেওয়ার তাড়নায় রিবন কেনার হিড়িকও পড়ে।
অন্যান্য বছরের মতো এ বার পঞ্চমীতে রাস্তায় ভিড় ছিল না বললেই চলে। এ বার দশমীতে সিঁদুর খেলাও বন্ধ। বহু মহিলার মন খারাপ। তবু তাঁরাও বলছেন, ‘‘আসছে বছর আবার হবে।’’ কিছু পুজো কমিটি অবশ্য রায় অপরিবর্তিত থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছে।
চুঁচুড়ার কারবালা বিবেকানন্দ রোডে মণ্ডপ হয়েছে তাইল্যান্ডের একটি মন্দিরের আদলে। মণ্ডপের বাইরে ব্যারিকেড পড়েছে। দর্শকদের ‘বঞ্চিত’ না করতে পথের ধারে জায়েন্ট স্ক্রিন লাগানো হচ্ছে। পুজোর কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ দত্তের বক্তব্য, ‘‘আশা করেছিলাম, অল্প কয়েক জন করে দর্শক ঢোকার ব্যবস্থা হবে। হল না। তবে আদালতের রায় নিয়ে কিছু বলার নেই।’’
শ্রীরামপুরের একটি বড় পুজো কমিটির কর্তা জানান, তাঁরা হতাশ। বুধবার বিকেলে মণ্ডপের সামনে ব্যারিকেড বসেছে। সঙ্গে ‘নো-এন্ট্রি’ বোর্ড। জিরাটের একটি পুজো কমিটির কর্তা তপন দাস বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হবে। না হওয়ায় খারাপ লাগছে। শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটী সম্মিলিত দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি প্রবীর পালের বক্তব্য, রায় সকলের মনের মতো নাও হতে পারে। কিন্তু সবাইকেই মানতে হবে। এই রায়ে সাধারণ মানুষের ভালই হবে।
আরামবাগ মহকুমায় এ বার অনুমোদিত মোট ৫২৬টি পুজো। মঙ্গলবার পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি পুজো কমিটি ছাড়া হাইকোর্টের রায় নিয়ে বেশিরভাগেরই বিশেষ হেলদোল ছিল না। বুধবার দুপুর থেকে তাদের বেশিরভাগ মণ্ডপ দর্শকশূন্য করতে তৎপর হল। এ দিন দমকল শহরের পুজো মণ্ডপগুলি স্যানিটাইজ় করে। বিকেলে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা পুজো কমিটিগুলির ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।
তবে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত শহরের ‘দৌলতপুর যুবশক্তি নাট্যমন্দির’ পুজো কমিটি মণ্ডপ ঘেরার কাজে হাত দেয়নি। শহরের এই পুজোতে প্রচুর ভিড় হয়। পুজো কমিটির সম্পাদক সজল কর্মকার বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারের নির্দেশে আগেই খোলামেলা মণ্ডপ করেছি। ‘নো-এন্ট্রি’ বোর্ড লাগানোর প্রয়োজন হলে পুলিশ-প্রশাসন নিশ্চয়ই বলবে।” গোঘাটের বদনগঞ্জ সোশাল অ্যাকশন ক্লাবের সম্পাদক মৌসম দালাল বলেন, “মণ্ডপে ‘নো এন্ট্রি’ থাকছেই। বাইরে দর্শক নিয়ন্ত্রণে পিপিই পরে আমাদের ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকছেন। দর্শকদের প্রত্যেকের হাত স্যানিটাইজ় করা হবে। মাস্কও বিলি করা হবে।”
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় ৮০৪টি পুজো হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপ স্যানিটাইজ় করা শুরু করেছে দমকল। বুধবারেও উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা প্রভৃতি এলাকায় অনেক মণ্ডপেই বেড়া পড়েনি। সেখানে ভিড় করতে দেখা গিয়েছে দর্শনার্থীদের। উদ্যেক্তারা দাবি করেছেন, সপ্তমী থেকেই আদালতের নির্দেশ মেনে বেড়া দেওয়া হবে।