বন্ধ: উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বাণীবন পঞ্চায়েতের হাজরা পরিবারের বাড়ি ভেঙেছে আমপানে। সন্তানদের নিয়ে পাশেই খোলা জায়গায় কাটছে দিন। পঞ্চায়েতের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি। ছবি: সুব্রত জানা ও সুশান্ত সরকার
এখনও পুরোপুরি ‘ভুল’ সংশোধন হয়ে উঠল না!
আমপানের পরে মাস ঘুরল। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, বিদ্যুতের লাইন, পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় পুরোটাই স্বাভাবিক হয়েছে। নদীবাঁধ সংস্কারের কাজও চলছে। কিন্তু ঘরবাড়ি হারিয়ে গ্রামীণ হাওড়ার যে সব মানুষ পথে বসেছিলেন, তাঁদের সকলকে এখনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া গেল না। বহু ক্ষতিগ্রস্ত চাষিও এখনও সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত। অথচ, কোনও ক্ষতিই হয়নি, এমন বহু নেতা ও চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকে গিয়েছে বা তালিকায় নাম উঠেছে!
কেন?
এর পিছনে দুর্নীতি দেখছে একটা মহল। কিন্তু প্রশাসনের দাবি, ভুল। জেলা পরিষদের সহ-সভাপধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমপান এমন একটা সময়ে হল, যখন করোনার জন্য জনজীবন বিপদে ছিলই। আমাদের প্রাথমিক কাজ যাঁদের বাড়ি পুরো ভেঙে গিয়েছে তাঁদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। তালিকায় কিছু ভুলত্রুটি নজরে এসেছে। সংশোধন করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হাতেই টাকা তুলে দেওয়া হবে। সেই কাজই এখন জোরকদমে চলছে।’’
আমপানের পরে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি তৈরির জন্য ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়। এরসঙ্গে ঘোষণা হয়, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাড়ি তৈরিতে মজুরি হিসেবে আরও ১৮ হাজার এবং শৌচালয় তৈরিতে ১০ হাজার টাকা মিলবে।
প্রাথমিক তালিকায় জেলা প্রশাসন জানায়, হাওড়ায় প্রায় ১৫ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। সেইমতো ‘ক্ষতিগ্রস্ত’দের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোও শুরু হয়। কিন্তু তারপরই নানা জায়গা থেকে ‘প্রাপককে’ নিয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরাও মুখ খুলতে শুরু করেন। তৃণমূল শাসিত একাধিক পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, পদাধিকারীদের নামই তালিকায় ওঠেনি, ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন বিজেপির নেতা ও তাঁদের আত্মীয়েরাও ওই তালিকায় স্থান পান বলে অভিযোগ ওঠে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলার বেশিরভাগ ব্লকে এই ধরনের অভিযোগ ওঠায় নতুন করে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম তালিকায় আছে কিনা।’’
নতুন তালিকা তৈরিতে আরও সময় লাগবে। এ দিকে বর্ষা হাজির। টাকা না-পেলে তাঁরা কী ভাবে বাড়ি তৈরি করবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। সাঁকরাইলের এক ক্ষতিগ্রস্তের আক্ষেপ, ‘‘তালিকায় আমার নাঁম আছে। কিন্তু ফের নতুন করে তালিকা তৈরি হচ্ছে বলে শুনেছি। বর্ষা এসে গেল। কবে টাকা পাব, আর কবেই বা বাড়ি তৈরি করব বুঝতে পারছি না।’’
জেলা প্রশাসনের হিসেবে, আমপানে গুরুতর এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা অন্তত এক লক্ষ। কিন্তু এ জন্য রাজ্য সরকার এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেনি। ফলে, ওই সব ক্ষতিগ্রস্তেরা কেউ সরকারি ত্রিপল দিয়ে ছাউনি তৈরি করে বসবাস করছেন, কেউ বা নিজের উদ্যোগে ব্যবস্থা করেছেন।
চাষের ক্ষতিও কম নয়। অন্তত ১০৩ কোটি টাকার। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা করেও দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও না-পাওযার অভিযোগ আছে। বরজই নেই, এমন অনেক পানচাষিও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিপূরণ না-পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ফুলচাষিরাও।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভেঙে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে প্রায় ১০ লক্ষ গাছের চারা বসানোর কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ঝড়ে মৃত চার জনের পরিবারকে সরকারের নীতি মেনে ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা পরিষদের সহ-সভাপধিপতি জানিয়েছেন।