প্রতীকী ছবি।
পরিচিত কিশোরীকে আমবাগানে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত পোলবার এক তৃণমূল নেতার ছেলেকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম সুমন সাঁতরা।
ঘটনাটি নিয়ে যাতে থানা-পুলিশ না হয়, সে জন্য অভিযুক্তের পরিবারের লোকেরা কার্যত সালিশি সভা বসান বলেও নির্যাতিতার আত্মীয়দের অভিযোগ। সেখানে পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষও উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের দাবি, সালিশি নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি।
নির্যাতিতার বয়স ষোলো বছর। সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। আত্মীয়দের অভিযোগ, সোমবার সন্ধ্যায় হেঁটে বাড়ির কাছেই টিউশন পড়তে যাচ্ছিল সে। সেই সময় সুমন ওই কাণ্ড ঘটায়। ভয়ে, লজ্জায় মেয়েটি বাড়ি ফিরে কিছু বলেনি। পরের দিন সব বলে। বুধবার সকালে মেয়েটির মা সুমনের বিরুদ্ধে পোলবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পকসো আইনের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। ওই দিনই তাকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে তাকে দু’দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
ধৃত বছর সাতাশের ওই যুবকের বাবা বরুণ সাঁতরা সুগন্ধা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। কিশোরীর মায়ের দাবি, মেয়ের উপরে অত্যাচারের কথা জেনে মঙ্গলবারেই বিষয়টি তাঁরা বরুণবাবুকে বলেন। তখন বরুণবাবুরা মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে সালিশি সভা করে মিটমাট করে নিতে বলেন। পোলবা-দাদপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত গোলও সেখানে ছিলেন। তবে, মেয়েটির পরিবার সমঝোতায় রাজি হননি।
মেয়েটির মা বলেন, ‘‘মেয়ের অতবড় সর্বনাশের পরে ওঁদের ভরসা করব কোন যুক্তিতে? তাই থানায় অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিই।’’
বরুণবাবু সালিশির কথা মানছেন না। তাঁর দাবি, ‘‘আমি অসুস্থ। ওঁরাই আমাকে বাড়িতে ডেকেছিলেন। পরে ওঁরা থানায় যান। পুলিশ ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ সঠিক তদন্ত করুক।’’ প্রশান্তবাবুরও দাবি, ‘‘মেয়ের মা ডেকেছিলেন, তাই গিয়েছিলাম। আমরা আগ বাড়িয়ে সালিশি সভা করিনি। মেয়ের মায়ের কথা অনুযায়ী সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। তার পরের ঘটনা বলতে পারব না।’’
এমন অভিযোগে পুলিশকে না জানিয়ে আলোচনায় উপস্থিত থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত? প্রশ্নের জবাবে ওই তৃণমূল নেতার সাফাই, ‘‘গ্রাম্য ব্যাপার। তাই গিয়েছিলাম।’’
হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের আধিকারিকদের বক্তব্য, অভিযোগের ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী সব পদক্ষেপই করা হচ্ছে। বুধবারই মেয়েটির মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে। সালিশির বিষয়ে কোনও অভিযোগ থানায় জমা পড়লে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।