চলছে বিক্ষোভ। আরামবাগের মলয়পুর ১ পঞ্চায়েতের টালা দক্ষিণপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র।
বরাদ্দ ডিম সহ অন্যান্য রান্না করা খাবারের পরিমাণ ও গুণমান নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। সোমবার উনুন ভেঙে গিয়েছে, এই দাবি করে রান্নাই হয়নি! এরপরেই আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের শেখপুরের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে তালা মেরে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা।
কেন্দ্রের কর্মী মনসা রায়কে জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে তালা মারা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ গিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করে। পরে আইসিডিএস প্রকল্পের ব্লক আধিকারিকেরা গেলে তাঁদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান মহিলারা।
অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে আরামবাগের সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক সায়ন্তন জোয়ারদার বলেন, “নিয়মিত রান্না করার ক্ষেত্রে অনিয়ম তো হয়েছেই। ওই কর্মীকে শো-কজ় করা হচ্ছে। আর এমন হবে না।’’
এই কেন্দ্রে শিশু, প্রসূতি ও গর্ভবতী উপভোক্তা মিলিয়ে ৮৫ জন রয়েছ। তার মধ্যে ৬ মাস থেকে ৬ বছরের শিশুর সংখ্যা ৭৪ জন। গ্রামবাসী রাখি চৌধুরী, জাহানার বেগম, মঞ্জু করের অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে কেন্দ্রটি অনিয়মিত ভাবে চলে। মাসের প্রায় অর্ধেক দিনই নানা অজুহাতে রান্না হয় না। খিচুরিতে ডাল, সয়াবিন, আনাজ কিছুই প্রায় থাকে না। শুক্রবার ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। এ দিন রান্নাই হল না। তারই প্রতিবাদ করা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মনসা রায় বলেন, “রান্নাঘরে ফুটো ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির জলে মাটির উনুন ধসে যায়। পাশে ইট পেতে নতুন উনুন করে রান্না করার প্রস্তুতি চলছিল। তখনই আমাকে ঘরে ঢুকিয়ে তালা মেরে দেওয়া হল।” তিনি জানান, শুক্রবার ডিম না থাকায় দেওয়া যায়নি। এ দিন দু’টো করে ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও তা ভেস্তে যায় বলে তাঁর দাবি।
খাবারের পরিমাণ এবং গুণমানের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর ব্যাখ্যা, ‘‘যেমন বরাদ্দ, তেমনই দেওয়া হয়। কয়েকটি পরিবার তাঁদের বাচ্চাদের ৫-৭ দিন অন্তর এক দিন পাঠিয়ে বাকি দিনের ডিম দাবি করেন। এক সঙ্গে ওত ডিম না দিতে পারলেই হেনস্থা হতে হয়। তা ছাড়া, দীর্ঘ দিন কেন্দ্রে সহায়িকা নেই। পানীয় জল দূর থেকে আনতে হয়।’’
খাবারের গুণমানের অভিযোগ তুলে গত ২৭ জুন আরামবাগের মলয়পুর ১ পঞ্চায়েতের তালা দক্ষিণপাড়ায় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীকে হুমকি, চাল-ডাল নষ্ট এবং বোর্ড ভাঙার ঘটনা ঘটেছিল। এ দিন থানায় এবং মহকুমাশাসকের কাছে সেই ঘটনায় স্থানীয় কমল রায়, ছোট্টু রায় নামে দুই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ জানানো হয় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সংগঠন থেকে। মহকুমা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ বিষয়টি দেখছে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।