টাকা ফেরত দিলেন নেতা। প্রতীকী চিত্র।
ছেলের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক ব্যক্তির থেকে এক লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বলাগড় ব্লক তৃণমূল সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। দলীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় শুক্রবার সুনীল দাস নামে বলাগড়ের রুকেশপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে সেই টাকা ফেরত দিলেন নবীন।
সূত্রের খবর, এ দিন বলাগড়ের মোক্তারপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ে সুনীলকে ডেকে পাঠানো হয়। দলের স্থানীয় সংগঠনের পদাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন। সুনীল বলেন, ‘‘নবীনবাবু সবার সামনেই ভুল স্বীকার করে টাকা ফিরিয়ে দেন। আমার উপরে কোনও রকম অত্যাচার হবে না, এই মর্মে লিখিত একটি কাগজ সকলের উপস্থিতিতে আমাকে দেওয়ার কথা হয়েছে। সেই কাগজ হাতে পাইনি।’’ সুনীল জানান, এলাকার তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীও ফোন করে তাঁকে অভয় দিয়েছেন। নবীন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতেরাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘দলের নিষেধ আছে।’’
সুনীল জানান, তিনি একটি ছোট চাকরি করতেন। অবসর নিয়েছেন। এখন পেঁয়াজ চাষ করেন। তাঁর অভিযোগ, ছেলেকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২১ সালে নবীন ১ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। চাকরি হয়নি। নবীন টাকাও ফেরত দিচ্ছিলেন না। বিষয়টি তিনি বিধায়ক-সহ তৃণমূলের অন্য নেতাদের জানানোয় নবীন রেগে গিয়ে বলেছিলেন, টাকা ফেরত দেবেন না। পরে একটি পুজো কমিটির নামে ৪৫ হাজার করে দু’টি চেক দিয়েছিলেন। প্রথম চেকটি ব্যাঙ্কে ভাঙাতে গিয়ে সুনীল জানতে পারেন, অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। বিষয়টি নিয়ে আনন্দবাজারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতেই তৃণমূল নেতৃত্ব নড়েচড়ে বসেন।
বৃহস্পতিবার সুনীল জানিয়েছিলেন, তৃণমূলের পক্ষ থেকে সব মিটিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হয়েছে। টাকা ফেরানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও প্রশাসন এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা না বলে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন না। শুক্রবার অবশ্য তিনি আর কোনও আপত্তি করেননি।
বলাগড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি অসীম মাঝি শুক্রবার বলেন, ‘‘মাস দুয়েক আগেই নবীনকে টাকা ফেরাতে বলি। এর পরে যখন চেক বাউন্স হয়, লজ্জায় মাথা কাটা যায়। সুনীলবাবুকে আর কিছু বলতে পারিনি। নবীনকে সতর্ক করি। টাকা ফেরাতে বলি। শান্তনু, কুন্তল, আর এই সব লোকদের খারাপ কাজের জন্য আমরা কেন ছোট হব?’’ বিধায়ক মনোরঞ্জনের বক্তব্য, ‘‘আমি নিশ্চিত, দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সব জানেন। প্রয়োজনে জেলায় দলের তরফে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরহাদ হাকিমকে সব বলব। আমরা কখনই চাই না, কোনও মন্দ লোকের জন্য দলকে মানুষ ভুল বুঝুন।’’
তৃণমূলের শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন জানান, নবীনের বিষয়টি নিয়ে তিনি দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। অরিন্দমের কথায়, ‘‘নানা বিষয় আমার কানেও এসেছে। এ দিন কালীঘাটের বৈঠকেই আমরা বার্তা পেয়েছি, দুর্নীতির প্রশ্নে রেয়াত করা হবে না। দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’’