হেলে গিয়েছে পাঁচতলা এই আবাসনটি।
ব্যবহার হচ্ছে ৫০০ ‘জ্যাক’। খরচ হচ্ছে ২৫ লক্ষ টাকা। ধীরে ধীরে সোজা হচ্ছে উলুবেড়িয়ার বাজারপাড়ার প্রায় ১৫ ইঞ্চি হেলে যাওয়া একটি পাঁচতলা আবাসন। হরিয়ানার একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে ২০ দিন ধরে ৫০ জন শ্রমিক এই কাজ করছেন। এর জন্য অবশ্য বাসিন্দাদের সরতে হয়নি।
এই প্রক্রিয়ায় হেলে যাওয়া ভবন সোজা করার কাজ হাওড়া জেলায় প্রথম হচ্ছে। তবে, দেশে এবং রাজ্যে এমন নজির রয়েছে। কয়েক বছর আগে নদিয়ার ফুলিয়ার চাঁপাতলাতেই একটি বাড়িকে ৭০ ফুট পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একই প্রক্রিয়ায়। কাজটি করেছিল হরিয়ানার ওই সংস্থাই। ২০১৭ সালে হুগলি রিষড়ায় হেলে পড়া একটি আবাসনকে সোজা করেছিল তারা। তার আগের বছর চুঁচুড়ায় বসে যাওয়া একটি একতলা বাড়িকে প্রযুক্তির সাহায্যে রাস্তা থেকে তিন ফুট উঁচু করে দেয় তারা।
বাজারপাড়ার বহুতলটির ক্ষেত্রে খরচ বহন করছেন সেটির প্রোমোটার অর্ণব ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘বহুতলটির পাশ দিয়ে একটি পুরনো এবং গভীর নর্দমা গিয়েছে। সেই নর্দমার খানিকটা বসে গিয়ে এই বিপত্তি। পুরসভাকে কথা দিয়েছি, বহুতলটি সোজা করে দেব। সেই মতো কাজ করছি।’’
হরিয়ানার সংস্থাটির কর্ণধার শিবচরণ সাইনি জানান, তাঁর সংস্থা ২৪ বছর ধরে এই কাজে যুক্ত। এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে কয়েক হাজার বাড়ি সরানো, উঁচু এবং সোজা করার কাজ করেছেন তাঁরা। তার মধ্যে এ রাজ্যেরও কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। শিবচরণ বলেন, ‘‘মাটির চরিত্র বুঝে কাজ করা হয়। আজ পর্যন্ত একটি বাড়িরও ক্ষতি হয়নি। বাড়ির মালিকের সঙ্গে আমাদের চুক্তি থাকে, বাড়ি সরানো বা উঁচু করার ক্ষেত্রে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হলে তার সব খরচ সংস্থা বহন করবে। এ ক্ষেত্রেও ফ্ল্যাট-মালিকদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।’’
বাজারপাড়ায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট জমিতে পাঁচতলা আবাসনটি তৈরির কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। এ পর্যন্ত মোট আটটি পরিবার ফ্ল্যাট নিয়েছে। গত মাসের গোড়ায় আবাসনের বাসিন্দারা দেখেন, সেটি দক্ষিণ দিকে হেলে যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও নজরে পড়ে। আতঙ্ক ছড়ায়। সকলে উলুবেড়িয়া পুরসভার দ্বারস্থ হন। পুরসভা প্রোমোটার অর্ণবকে ডেকে দ্রুত আবাসন সোজা করার নির্দেশ দেয়। অর্ণব হরিয়ানার ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কী ভাবে বাড়িটি সোজা
করা হচ্ছে?
ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিত থেকে ভবনের কতটা কোন দিকে হেলেছে, সেটা প্রথমে মাপজোক করে নেওয়া হয়েছে। তারপর আবাসনের ভিত পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছে। ভিতের প্রায় তিন ফুট অংশ থাকছে মাটির নীচে। ভিতের উপরের অংশ থেকে ইট সরিয়ে ‘জ্যাক’ লাগানো হয়েছে। ৫০০টি ‘জ্যাক’ লাগিয়ে ভিত থেকে বহুতলটি আলাদা করা হয়েছে। তারপর আস্তে আস্তে ‘জ্যাক’ দিয়ে হেলে যাওয়া অংশ সোজা করা হচ্ছে। ‘জ্যাক’গুলির উপরে বহুতলটিকে দাঁড় করিয়ে মাঝের অংশে ইটের গাঁথনি দেওয়া হচ্ছে। গাঁথনি শেষ হলে জ্যাকগুলি বের করা হবে।
৫০০টি ‘জ্যাক’ লাগিয়ে ভিত থেকে বহুতলটি আলাদা করা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
বহুতলটির বাসিন্দা রাজশ্রী অধিকারী বলেন, ‘‘যখন বহুতলটি আস্তে আস্তে হেলছিল, তখন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এখন অনেকটাই সোজা হয়ে গিয়েছে। ভয় কেটে গিয়েছে।’’ উলুবেড়িয়ার পুরপ্রশাসক অভয়কুমার দাস বলেন, ‘‘বহুতলটি হেলে যাওয়ার খবর পেয়েই পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল পাঠানো হয়েছিল। কথামতো প্রোমোটার বহুতলটি সোজা করাচ্ছেন। যে সংস্থা কাজটি করছে, তারা ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দিলে তবেই এ নিয়ে পরবর্তী মন্তব্য করব।’’