বেআইনি: হাওড়া ময়দান চত্বরে ফুটপাত দখল করে বসেছেন হকারেরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
আগে শহরের কয়েকটি মাত্র ফুটপাতই ছিল হকারদের দখলে। কিন্তু বর্তমানে ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন হকারেরা। সেখানে প্লাস্টিক বা চটের ছাউনি দিয়ে মাথা ঢেকে অবাধেই চলছে কেনাবেচা। পরিস্থিতি এমন যে, বিপদের ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের ফুটপাত থেকে নেমে রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে। হাওড়া পুর এলাকার সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে এমনই হকার-চিত্র। হকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাই কোর্টের গুচ্ছ গুচ্ছ নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা কার্যকর না করায়এ বার হাওড়া পুরসভার টাউন ভেন্ডিং কমিটির ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, আইন মেনে হাওড়ায় একটি ৭ সদস্যের টাউন ভেন্ডিং কমিটি রয়েছে। শহরে হকারদের বসার জায়গা বা হকার জ়োন চিহ্নিত করা, কোন কোন রাস্তায় হকারদের বসার অনুমতি নেই তা চিহ্নিত করা, হকারদের সমস্যা দেখা এই কমিটির কাজ। ওই কমিটির সদস্যদের মধ্যে পরামর্শদাতা হিসাবে রয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান। পুর কমিশনার ও পুর সচিব রয়েছেন সরকারি প্রতিনিধি হিসাবে। এ ছাড়াও রয়েছেন তৃণমূলের দুই প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধি ও তৃণমূলের এক শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি স্তরের একজন প্রতিনিধি। এই কমিটিতে বাম হকার সংগঠনের কোনও প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি।
অভিযোগ, হাওড়া পুরসভায় আইন বাঁচাতে একটি টাউন ভেন্ডিং কমিটি থাকলেও তা আদতে নিষ্ক্রিয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কমিটির বৈঠক ডাকা হলে সদস্যেরা নিয়মিত আসেন না। তাই কালেভদ্রে বৈঠক হয়। আবার বৈঠক হলেও শহরে বেপরোয়া হকার নিয়ন্ত্রণে সঠিক রূপরেখা বা তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট হকার জ়োন তৈরি করার কোনও সিদ্ধান্তও রহস্যজনক কারণে নেওয়া হয় না।
হাওড়া শহরের মূল লাইফ লাইন হল জিটি রোড। সেখানে হাওড়ার দক্ষিণ থেকে উত্তরে জিটি রোডের দু’পাশের ফুটপাতই রীতিমতো বেদখল হয়ে গিয়েছে। সব থেকে বড় সমস্যা হাওড়া ময়দান চত্বরে। সেখানে ফুটপাত তো বটেই, এমনকি বেদখল হয়ে গিয়েছে রাস্তাও।
সিটু অনুমোদিত হাওড়া হকার সমিতির সম্পাদক অরূপ রায় বলেন, ‘‘সরকারি ব্যর্থতার জন্য হকারদের সঠির পুর্নবাসন দেওয়া যায়নি। টাউন ভেন্ডিং কমিটিতেও আমাদের রাখা হয়নি। এটা ঠিক, দেশে যে ভাবে বেকারত্ব বাড়ছে তাতে হকারদের সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সরকারকে সঠিক রূপরেখা তৈরি করতে হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের অগস্টে টাউন ভেন্ডিং কমিটির শেষ বৈঠকে ‘নো হকার জ়োন’ হিসাবে যে ১০টি রাস্তা ঠিক করা হয়েছিল, তার মধ্যে অধিকাংশই ফাঁকা রাস্তা। সেখানে কোনও দিনই হকারেরা বসতেন না। যেমন ফোরশোর রোড, ড্রেনেজ ক্যানেল রোড, ইস্ট ওয়েস্ট বাইপাস, ডিউক রোড ইত্যাদি। কিন্তু মূলত যে সব ফুটপাত হকারদের দখলে চলে গিয়েছে (যেমন জিটি রোড, হাওড়া ময়দান, সালকিয়া চৌরাস্তা সংলগ্ন দু’পাশের রাস্তা, পঞ্চাননতলা রোড), এগুলির কোনওটিই ‘নো হকার জ়োনের’ তালিকাভুক্ত হয়নি। অথচ এই রাস্তাগুলিতেই হকারদের কারণে সমস্যায় পড়েছেন দোকানদার থেকে সাধারণ মানুষ।
হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাওড়া পুরসভা একা হকার তুলতে পারে না। প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে মিলে এটা সামগ্রিক ভাবে করতে হবে। খুব শীঘ্রই যেহেতু মেট্রোরেল চালু হবে, তাই টাউন ভেন্ডিং কমিটির সঙ্গে বসে এ নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’’