গুলিবিদ্ধ টোটোনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
রীতিমতো পরিকল্পনা করে হামলা!
শনিবার ভরা চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে প্রকাশ্যে যে ভাবে চুঁচুড়ার ত্রাস টোটন বিশ্বাসকে গুলি করেখুনের চেষ্টা হল, তাতে এই জল্পনাই দানা বেঁধেছে।
কারা এই ঘটনায় জড়িত, রাত পর্যন্ত সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি পুলিশ। চন্দননর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকদের দাবি, দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তবে, যে ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে পুলিশেরই একটি অংশ মনে করছে, হামলার আগে ‘রেকি’ করেছিল দুষ্কৃতীরা। টোটন যে চুঁচুড়া থানার হেফাজতে রয়েছে, দুষ্কৃতীরা তা জানত। শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য শুক্রবার প্রায় একই সময়ে টোটনকে যে ওই হাসপাতালে আনা হয়েছিল, সে খবরও ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে। সম্ভবত, শুক্রবারই তারা হাসপাতালে ‘রেকি’ করে যায়। থানা থেকে টোটনকে কথন বের করা হচ্ছে, সে দিকেও তাদের নজর ছিল। হিসেব মিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে হাসপাতালে রোগীর আত্মীয় সেজে থাকা দুষ্কৃতীরা ‘অপারেশন’ সারে।
চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের অন্ধকার জগতের ‘ডন’ হিসেবে পরিচিতি টোটনের। তার নামে ডরায় না, চুঁচুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় এমন লোক মেলা ভার। খুন, বেআইনি অস্ত্র রাখা, তোলাবাজি, ডাকাতির বহু মামলা ঝুলছে তার নামে। এ হেন দুষ্কৃতীকে প্রকাশ্য দিবালোকে হাসপাতালের মতো জায়গায় পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতীরা গুলি করায় জেলাসদরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এ দিন হাসপাতাল চত্বরে অনেককেই বলাবলি করতে শোনা গিয়েছে, পুলিশের সামনে এমন ভিড়ে যদি গুলি চলে, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা এক মহিলার গলায় শঙ্কা, ‘‘যদি সাধারণ মানুষের গায়ে গুলি লাগত!’’
কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে টোটন হামলাকারী হিসেবে বাবু পাল নামে এক দুষ্কৃতীর নাম জানিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বাবু টোটনেরই সহকারী ছিল। টোটনের ‘হিসেবরক্ষক’ হিসেবে সে কাজ করত। বনিবনা না হওয়ায় বছর চারেক আগে টোটনের সঙ্গ ছেড়ে নতুন দল গড়ে বাবু। তদন্তকারীদের কাছেও এক দুষ্কৃতীর নাম টোটন জানিয়েছে বলে খবর। পুলিশ অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলেনি।
টোটনের বাড়ি চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, প্রয়াত এক সিপিএম সাংসদের হাত ধরে বাম জমানায় সমাজবিরোধী হিসেবে তার উত্থান। তার আগে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা টোটন ভাল ফুটবলার হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই টোটনই পরে এলাকায় ‘ডন’ হয়ে ওঠে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে সে শিবির বদল করে।
কয়েক বছর আগেও রবীন্দ্রনগরে জিটি রোড থেকে রেললাইনের ধারে টোটনের সুপুরি কারখানা পর্যন্তবিস্তৃত গলি সিসিক্যামেরায় মোড়া ছিল। অপরিচিত কেউ এলাকায় ঢুকলে তার সশস্ত্র শাগরেদরা তল্লাশি চালিয়ে তবে প্রবেশের অনুমতি দিত। শোনা যায়, বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীরা যেন হামলা চালাতে না পারে, সে জন্য যথাসম্ভব নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নিজেকে রাখত টোটন। কয়েক বছর আগে টোটনের ডেরায় হানা দিয়ে বিপাকে পড়ে গিয়েছিল পুলিশ। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে এসেছিল পুলিশের দিকে। তখনকার মতো পুলিশকে পিছু হটতে হয়। কিন্তু তার পরেই পুলিশ লাগাতার অভিযান চালিয়ে টোটন-সহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়।
তিন বছর আগে প্রকাশ্য দিবালোকে ভরা ব্যান্ডেল স্টেশনে এক তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা। এ দিনও হাসপাতালে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় দুষ্কৃতীদের দুঃসাহস নিয়ে তাজ্জব তদন্তকারীরারা।