ভূত রয়েছে সর্ষের মধ্যেই। তাই বছরের পর বছর হাওড়া জুড়ে চলে বেআইনি নির্মাণের রমরমা। অসাধু প্রোমোটার, পুলিশ, পুরকর্মী থেকে তোলাবাজ দুষ্কৃতী— লাভের গুড় জুটে যায় সকলেরই। তাই কি বদলায় না কিছু?
Illegal Construction

Illegal Construction: বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত হলেই পৌঁছে যায় ‘নজরানা’

সাড়ে ১৫ মিটার বা চারতলার বেশি উঁচু বাড়ি করতে গেলে পুরসভার নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে দমকল দফতরের ‘ফায়ার সেফটি রেকমেন্ডেশন’ লাগে।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

হাওড়া শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

তথ্য বলছে, হাওড়া শহর জুড়ে বেআইনি বহুতলের রমরমা শুরু হয়েছিল মূলত বাম আমলে। সেই আমলেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তুলে নেওয়া হয়েছিল হাওড়া পুরসভায় থাকা বিল্ডিং ট্রাইবুনাল। যার ফলে বেআইনি বহুতলের বিরুদ্ধে পুরসভা ব্যবস্থা নিলেও বেআইনি নির্মাণকারীরা আদালতে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই আইনের ফাঁক গলে হাওড়া শহরে শুরু হয় বেআইনি নির্মাণের রমরমা। যা আজও অব্যাহত।

Advertisement

কিন্তু পুরসভাকে ফাঁকি দিয়ে কী ভাবে তৈরি হচ্ছে এত অবৈধ বহুতল? পুরসভার অনুমোদিত নকশা ছাড়া যেখানে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ মেলারই কথা নয়, সেখানে কী ভাবে শহর জুড়ে বছরে পাঁচশোরও বেশি অবৈধ বহুতল তৈরি হয়?

পুরকর্তারা জানিয়েছেন, বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করার পরে পুরসভা প্রথমে কাজ বন্ধের নোটিস পাঠায়। তার পরে সংশ্লিষ্ট বরোর সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বাড়ির মালিককে শো-কজ় নোটিস পাঠান। পুরসভার বিল্ডিং দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, অধিকাংশ সময়েই শো-কজ় নোটিস দেওয়ার জন্য মালিক বা প্রোমোটারকে পাওয়া যায় না। যদি কাউকে পাওয়া যায়, তা হলে তাঁকে বরো অফিসে বা পুরসভার সদর দফতরে শুনানির জন্য ডাকা হয়। শুনানিতে পুর কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট না হলে ১৫ দিনের মধ্যে নির্মাণের বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলতে (সেলফ ডেমোলিশন) নির্দেশ দেওয়া হয় নির্মাণকারীকে। তাতেও কাজ না হলে পুরসভা থেকে পুলিশের কাছে চিঠি পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর ঠিক এই সময়েই ‘খেলা’ শুরু হয় অসাধু প্রোমোটার-চক্রের। অভিযোগ, চক্রের মাথাদের তরফে বরো অফিসের কর্তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় ‘নজরানা’। স্থানীয় থানাতেও ‘সেটিং’ করে ফেলা হয়। ফলে নির্মাণকাজ আদতে বন্ধ হয় না। তারই মধ্যে ফ্ল্যাটে ক্রেতাদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যে কারণে পুরসভার পক্ষে বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে ১৫ মিটার বা চারতলার বেশি উঁচু বাড়ি করতে গেলে পুরসভার নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে দমকল দফতরের ‘ফায়ার সেফটি রেকমেন্ডেশন’ লাগে। খাতায়-কলমে থাকলেও বাস্তবে সে সব নিয়ম যে মানা হয় না, কার্যত তা মেনে নিয়েছেন হাওড়ার ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার তপন বসু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রতি সপ্তাহেই হাওড়ায় তৈরি হওয়া বহুতলগুলির ফায়ার-অডিট রিপোর্ট তৈরি করি। যে সমস্ত বহুতল নিয়ম না মেনে তৈরি হচ্ছে, সেগুলির মালিকদের আমরা নোটিস দিচ্ছি।’’

কিন্তু এই অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করা যায় না কেন?

হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘কাজ বন্ধ করতে না পারার অন্যতম কারণ হল, পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব। অবৈধ বাড়ি ভাঙতে চাইলেও পুলিশের পক্ষ থেকে সব সময়ে বাহিনী মেলে না। তা ছাড়া, বিল্ডিং দফতরে ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যাও খুব কম। মাত্র ১২ জন। সেই সঙ্গেই প্রয়োজন, প্রতিটি বরোর জন্য বাড়ি ভাঙার আলাদা দল।’’ অবৈধ বাড়ি ভাঙার কাজে পুলিশি পাহারা না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভাকে যতটা সম্ভব সাহায্য করি আমরা। অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

বেআইনি নির্মাণের এই সংস্কৃতি কি তা হলে চলবেই?

রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী তথা হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অরূপ রায়ের সাফ জবাব, ‘‘হাওড়ায় বেআইনি নির্মাণ কোনও ভাবেই চলতে দেওয়া যাবে না। পুর কমিশনার ইতিমধ্যেই বেআইনি বাড়ি চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন। যাঁরা নিয়ম ভেঙে বাড়ি তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর বর্তমান চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বললেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নির্মীয়মাণ সব বেআইনি বাড়ি ভেঙে দেব। তবে যে সব বেআইনি বহুতলে লোকজন বসবাস করছেন, সেগুলি এখনই ভাঙা হবে না। তবে সেগুলির মিউটেশনও করতে দেব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement