বাদ পড়েছে তৃণমুল কর্মীদের নাম। — ফাইল চিত্র।
আবাস প্লাসের সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে হাওড়া জেলায়। গ্রামসভায় চূড়ান্ত তালিকাও অনুমোদিত হয়েছে। ২০১৮ সালের করা তালিকায় যে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার সম্ভাব্য উপভোক্তার নাম ছিল, তা থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ নাম বাদ পড়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। এই বাদ পড়াদের অধিকাংশই তাদের দলীয় কর্মী-সমর্থক বলে জেলা তৃণমূলের দাবি। আর এর জেরে তাঁদের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো বলে খেদ প্রকাশ করেন একাধিক জেলা তৃণমূল নেতা।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সৌমেন পাল বলেন, ‘‘যথাসম্ভব স্বচ্ছতার সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে বিডিওরা নিজেরাই থানার ওসি-আইসিদের সঙ্গে নিয়ে সমীক্ষা করেছেন। যাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য নন, তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা যোগ্য, তাঁদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছে।’’
কেন খেদ জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশের?
ওই নেতারা জানিয়েছেন, যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে সিংহভাগই দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের অনুগামী। ২০১৮ সালে যখন ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে কেন্দ্রের নির্দেশে আবাস প্লাসের তালিকা তৈরি হয়, তখন দলের এইসব পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের তরফ থেকে তালিকায় নাম থাকা অনুগামীদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা বাড়ি পাবেন বলে। কিন্তু তা হচ্ছে না। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এতে সমস্যা বাড়ল।
গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘আবাস প্লাস নিয়ে আমাদের অবস্থা হয়েছে শাঁখের করাতের মতো। নাম বাদ না গেলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠত। এখন যাঁদের নাম বাদ গেল, তাঁরা আমাদেরই দুষছেন। তাঁরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, চক্রান্ত করে তাঁদের নাম আমরাই বাদ দিয়েছি। কারণ, যে আশাকর্মীদের দিয়ে সমীক্ষা করানো হয়েছে, তাঁদের সিংহভাগই যে আমাদের দলীয় সমর্থক, সেটা কে না জানে!’’
আর এক নেতা বলেন, ‘‘যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের সিংহভাগ আমাদের সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধেই তাঁদের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীরা তাঁদের নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করছে। প্রতি পঞ্চায়েতেই বাদ পড়াদের সংখ্যা কয়েকশো করে। তাঁদের মধ্যে যদি বিরোধীরা প্রভাব বিস্তার করতে পারে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে।’’
এ কথা ঠিক, বাদ পড়াদের নিয়ে বিরোধীরা ইতিমধ্যে সোচ্চার হয়েছে। সিপিএম, বিজেপি, ফরওয়ার্ড ব্লক সরাসরি অভিযোগ করেছে,ঘরের প্রকৃত দাবিদার বহু গরিবমানুষ সমীক্ষায় বাদ পড়েছেন।বামেরা দাবি করেছে, ২০১৮ সালের তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, সবাইকে বাড়ি দিতে হবে। কারও নাম বাদ দেওয়া যাবে না।
বিরোধীদের এই দাবির মধ্যেই বিপদ দেখতে পাচ্ছেন শাসক দলের নেতাদের একাংশ। তেমন আশঙ্কার কথা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেন। তিনি বলেন, ‘‘আবাস প্লাসে দল যে নাক গলাবে না, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আমাদের দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে যা হওয়ার তা প্রশাসনিক স্তরেই হচ্ছে।’’ বিরোধীদের তৎপরতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা কোথায়? এক একজন কাগুজে বাঘ। আমরা দিনের পর দিন মানুষকে বলেছি, কারা আবাস প্লাসে ঘর পাবেন, কারা পাবেন না। কেন্দ্রীয় সরকারই এই নির্দেশ রাজ্যেরউপরে চাপিয়েছে। তারপরেও বিরোধীরা মানুষকে ভুল বোঝাতে পারেন। তবে, এই খড়কুটো আঁকড়ে তাঁদের বেঁচে থাকার অপচেষ্টা মানুষ ব্যর্থ করে দেবেন।’’