সিইএসসির কর্মীরা মাটির নীচের কেবল সারাইয়ের কাজে ব্যস্ত। নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যা গড়িয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ১০টা নাগাদ যখন বিদ্যুৎ ফিরেছিল, সিইএসসি-র তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, আর সমস্যা হবে না। এসি-পাখা চালিয়ে নিশ্চিন্তে বালিশে মাথা রেখেছিলেন উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার ১২ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষজন। কিন্তু, বিধি বাম। শুক্রবার সকালের আলো ফোটার আগেই ফের লোডশেডিং। ফলে, ঘুমের দফারফা হল। তার পরেও দিনভর দফায় দফায় বিদ্যুৎ উধাও হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে মেরামতির কাজ চালিয়ে গিয়েছেন সিইএসসি-র ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরা। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে কর্মরত, সিইএসসির এক পদস্থ আধিকারিক জানান, মাটির নীচে কেব্ল সারাইয়ের কাজ চলছে। লোডশেডিংয়ে মানুষের সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য বিকল্প হিসেবে রাত সাতটার পরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর এনে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়।
পরিস্থিতির দায় যথারীতি বাড়তি গরমের উপরে চাপালেও সিইএসসি আধিকারিকদের পর্যবেক্ষণে প্রশ্ন উঠছে, শহর জুড়ে গজিয়ে ওঠা সব বহুতল নিয়ম মেনে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে কি না!
মেরামতের কাজে আসা সিইএসসি-র কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, উত্তরপাড়ায় বহু আবাসন গড়ে উঠেছে। ফলে, পরিবারের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু বহ সময়েই আবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েও ট্রান্সফর্মার বসানোর জায়গা মিলছে না। তার জেরে ক্ষমতার তুলনায় বেশি চাপ পড়ছে রাস্তার ট্রান্সফর্মারের উপরে। সারা বছর খুব একটা সমস্যা না হলেও বাড়তি গরমে ট্রান্সফর্মার চাপ সামলাতে পারছে না। কেননা, এই সময় এসি-র ব্যবহার অনেক বেড়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থায় যন্ত্র বিগড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
সাধারণ মানুষের বক্তব্য, পুরসভা বা বিদ্যুৎ দফতর আদর্শ পরিস্থিতি ছাড়া যদি আবাসনের অনুমতি না দেয়, কঠোর ভাবে বিধি মানা হয়, তা হলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে না। সার্বিক ভাবে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে ভুগতে হবে না।
শহরের ওই দুই ওয়ার্ডে সোম ও মঙ্গলবারও লোডশেডিং হয়। তার জেরে মানুষ নাকাল হন। বৃহস্পতিবার ফের একই পরিস্থিতি হয়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বিদ্যুৎ এলে মানুষজন ভেবেছিলেন, রাতের ঘুম স্বস্তির হবে। হয়নি। ভোরে ফের লোডশেডিংয়ে ঘুম ভেঙে অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। স্বস্তি খুঁজতে গাছের ছায়ায় বসে পড়েন কেউ কেউ। বিদ্যুৎ ফেরে ঘণ্টা চারেক পরে। ততক্ষণে, ঘুমের সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এর পরেও সারা দিনে মাঝেমধ্যেই লোডশেডিং হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে ছিলেন পুরপ্রধান তথা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি (কাউন্সিলর) দিলীপ যাদব। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি মৌসুমী বিশ্বাসও ছিলেন। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘সিইএসসি-র কর্মীরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা অতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ায় যন্ত্রপাতি বিগড়ে গিয়েই বিপত্তি হয়েছে বলে, ওঁরা জানিয়েছেন।’’