Missing

Missing: আপনি ‘নিখোঁজ’, বাড়ি ফিরে পুলিশের ফোনে অবাক রোগী

হাসপাতাল সূত্রের খবর, কিশোরী সাউয়ের ছুটি হয় রবিবার। কিন্তু বাড়ির লোক নিয়ে যাননি। তাঁর ছুটির কাগজটিই নোটনের হাতে চলে যায়।

Advertisement

কেদারনাথ ঘোষ

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৭:৪৮
Share:

ভুল ডিসচার্জ সার্টিফিকেট হাতে বিশ্বজিৎ দাস। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙা পা নিয়ে বাড়ি ফিরতেই থানা থেকে ফোন। পুলিশের কাছে বৈদ্যবাটীর তেঁতুলতলা ধানমাঠ এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস জানলেন, তিনি ‘নিখোঁজ’। হাসপাতাল থেকে ‘পালিয়ে’ এসেছেন। শেষে, কাগজপত্র দেখে ভ্রান্তি দূর হল। দেখা গেল, অন্য রোগীর ‘ডিসচার্জের’ কাগজ ধরিয়ে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ওই রোগী এবং তাঁর আত্মীয়েরা। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের ঘটনা।

Advertisement

বছর তেতাল্লিশের বিশ্বজিতের পেশা— সাইকেল খেলা দেখানো। বাড়ির লোকেরা জানান, গত ১৯ জুলাই সাইকেল-দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ হাঁটুর মালাইচাকি ভেঙে যায়। ১১ অগস্ট ওয়ালশ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, সোমবার ছুটি দেওয়া হবে। ওই সন্ধ্যায় ছেলে নোটন তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন।

মঙ্গলবার সকালে শ্রীরামপুর থানা থেকে বাড়িতে ফোন করে বলা হয়, বিশ্বজিৎ হাসপাতাল থেকে ‘পালিয়েছেন’। থানায় দেখা করতে বলা হয়। পুলিশের কথায় সবাই আকাশ থেকে পড়েন। এর পরেই তাঁরা ‘ডিসচার্জ’-এর কাগজে দেখেন, সেটি ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা জনৈক কিশোরী সাউয়ের। নোটন থানায় ছোটেন। সব দেখে পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিশোরীর কাগজ নিয়ে বিশ্বজিতের ‘ডিসচার্জ’-এর কাগজ নোটনকে দেন। সঙ্গে ৭ দিনের ওষুধ। ৭ দিন পরে বহির্বিভাগে দেখানোর পরামর্শও দেওয়া হয়।

Advertisement

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘এক মাস চার দিন হাসপাতালে ছিলাম। মালাইচাকি ভেঙে শয্যাশায়ী। পালাব কী করে! আমি ছাপোষা মানুষ। থানা-পুলিশে বেজায় ভয়। থানা থেকে যখন বলল, আমি নিখোঁজ, ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।’’ নোটন বলেন, ‘‘নার্সরা আমাকে দিয়ে একাধিক কাগজে সই করান। গাড়ি ভাড়া করে বাবাকে বাড়ি নিয়ে আসি। আমাকে যে ভুল কাগজ দেওয়া হয়েছে, দেখিনি। ওঁদের আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিশ্বজিতের কাগজপত্র ওয়ার্ডে থাকলেও তাঁকে শয্যায় না দেখে রাতে নার্সরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। এর পরেই হাসপাতালের তরফে থানায় জানানো হয়। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে বলা হয়, উনি পলাতক। সেইমতোই ওঁর বাড়িতে যোগাযোগ করি।’’ হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট জয়ন্ত সরকারের বক্তব্য, ‘‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় হয়তো এক জনের কাগজ অন্য জন নিয়ে গিয়েছেন। ভুল সার্টিফিকেট চলে যাওয়ার পরে রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরেই পুলিশকে বলা হয়।’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, কিশোরী সাউয়ের ছুটি হয় রবিবার। কিন্তু বাড়ির লোক নিয়ে যাননি। তাঁর ছুটির কাগজটিই নোটনের হাতে চলে যায়। বছর আটাত্তরের কিশোরীকে মঙ্গলবার তাঁর আত্মীয়েরা ফের এখানেই ভর্তি করান। তাঁর ছেলে রাজেশের বক্তব্য, ‘‘বাবা পুরোপুরি সুস্থ হননি। তাও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসাও করা হচ্ছিল না। আমাদের মনে হয়েছে, আরও চিকিৎসা দরকার। তাই ফের ভর্তি করিয়েছি।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ভর্তি রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল না বলেই ওই বৃদ্ধকে ছুটি দেওয়া হয়। এ দিন বাড়ির লোক সমস্যার কথা বলায় ফের ভর্তি নেওয়া হয়। কোনও ক্ষেত্রেই চিকিৎসার গাফিলতি হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement