গোঘাটে পোড়ানো হচ্ছে তুবড়ি।
কালীপুজোয় শব্দবাজির তাণ্ডব হবে, না কি সচেতনতার প্রতিফলন দেখা যাবে হুগলিতে, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। শ্রীরামপুর এবং চন্দননগরে যথারীতি শব্দ-তাণ্ডব চলল। তুলনায় সোমবার রাতে জেলার অন্যত্র শব্দের উৎপাত অনেকটাই কম বলে অনেকেই জানিয়েছেন। তবে, তা সচেতনতায়, না কি দিনভর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কারণে, সে প্রশ্ন থাকছেই।
আগের মতো ঘনঘন বুককাঁপানো আওয়াজ না-থাকলেও এ দিন সন্ধ্যা হতেই আরামবাগে বিক্ষিপ্ত ভাবে বাজি ফেটেছে। রাত গড়িয়েছে, আওয়াজও বেড়েছে। শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বাজির দুমদাম আওয়াজ এসেছে থানায়। পুলিশের দাবি, সেই আওয়াজ ‘সবুজ বাজি’র। সন্ধ্যায় চন্দননগরের কাঁটাপুকুর-সহ নানা এলাকায় বিকট শব্দে বাজি ফাটে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। একই ছবি দেখা গিয়েছে শ্রীরামপুরেও। চুঁচুড়া, ব্যান্ডেল, ভদ্রেশ্বর, ডানকুনি, পোলবা, মগরা, হরিপাল, তারকেশ্বরের কিছু জায়গায় মোটের উপরে বাজির শব্দ ভালই ছিল। উত্তরপাড়া, বৈদ্যবাটী, পান্ডুয়া প্রভৃতি জায়গায় উৎপাত কম ছিল। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে বলাগড় ব্লকের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদেরও।
আরামবাগের বাসিন্দাদের অনেকে জানিয়েছেন, আগের তুলনায় শহরের গৌরহাটি মোড়, পিসি সেন রোড সংলগ্ন পুরনো বাজারপাড়া, ব্লকপাড়া, হাসপাতাল রোড, বসন্তপুর মোড় ছিল অনেক শান্ত। পুলিশের টহল দিয়েছে। সচেতন হয়েছে বিভিন্ন পুজো কমিটিও। প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব, সদরঘাট ক্লাব, নওপাড়া পুজো কমিটি নিষিদ্ধ শব্দবাজি না-ফাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল জানান, সর্বত্র পুলিশের কড়া নজরদারি চলছে। অভিযোগ জানানোর জন্য এসডিপিও অফিস, থানায় কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে।
৩৬ তম বর্ষের শক্তি আরাধনার ও আলোকমালার উৎসবের বর্ণময় আয়োজন। পরিচালনায় বনহুগলী যুবক সংঘ।
সিঙ্গুরে ডাকাতকালীর মন্দিরে তুবড়ি প্রদর্শনী হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ওই প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়েছে। পান্ডুয়া থানা সূত্রের দাবি, গত বছর যে সব গ্রামে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বাজি ফাটানোর অভিযোগ এসেছিল, এ বার সেখানে টহল বাড়ানো হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও অভিযোগ মেলেনি।
সন্ধ্যায় হুগলি গ্রামীণ জেলার এসপি অমনদীপ জানান, বাজি ফাটানো নিয়ে গুরুতর কোনও অভিযোগ কোনও থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, ‘‘গত ৮ দিনে ১৩০০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত এবং ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
পুলিশি নজরদারি ছিল চন্দননগর কমিশনারেটের বিভিন্ন থানা এলাকাতেও। কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাজি ফাটানো নিয়ে অভিযোগ এলেই ঘটনাস্থলে পৌছে যাচ্ছে বাহিনী।’’ উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মঞ্জুশ্রী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশি আওয়াজে আমাদের মতো বয়স্কদের সমস্যা হয়। যে কারণেই বাজি পুরোপুরি না ফাটুক, এই পরিস্থিতি মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে।’’ বৈদ্যবাটীর বাসিন্দা সমীর দত্ত বলেন, ‘‘বাজির বিকট আওয়াজ তেমন কানে আসেনি। তবে, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেখতে হবে।’’
নাগরিক সংগঠন অল বেঙ্গল সিটিজেন্স ফোরামের সভাপতি শৈলেন পর্বতের বক্তব্য, ‘‘কয়েকটি জায়গা থেকে বাজির উৎপাতের অভিযোগ পেয়েছি। প্রশাসন দুর্গাপুজোর সময় থেকে নজরদারি এবং ধরপাকড় করলে মানুষ পুরোপুরি স্বস্তি পেতেন। সেটা হল না।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের কাছে সন্ধ্যা পর্যন্ত হুগলি থেকে খুব বেশি অভিযোগ মেলেনি। সন্ধ্যায় মঞ্চের এক সদস্যের কথায়, ‘‘আজকের রাত এবং কালকের পরিস্থিতি না দেখে সব ভাল বলা যাবে না। তবে, এখন পর্যন্ত অন্যান্য বছরের তুলনায় শব্দযন্ত্রণা বেশ কম।’’
বাজির তাণ্ডব বন্ধে হুগলিতে নাগরিক আন্দোলন চলছে। বিভিন্ন গণ-সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরাও রাস্তায় নেমেছেন। পুলিশও কয়েক দিন ধরে ধরপাকড় এবং সচেতনতা প্রচার করেছে। তাতে বাজি ব্যবহারকারী, ব্যবসায়ীদের একাংশ সচেতন হয়েছেন বলে অনেকের ধারণা। প্রশাসন আরও আগে তৎপর হলে, শব্দদৈত্যকে পুরোপুরি বোতলে পুরে ফেলা যেত বলে তাঁদের বক্তব্য।