পূর্ত দফতরের অফিসের গেট তালাহীন। স্টেট জেনারেল হাসপাতালের এখানে জ্বলে না আলোও। নিজস্ব চিত্র।
শনিবার রাত ১২টা ১০ মিনিট। ১২ একর পরিসরের উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পিছনে চক লেনের দিকের বড় গেটে চেন সহ তালা ঝুলছে। দূর থেকে মনে হচ্ছিল, ঢোকা যাবে না। কাছে এগোতেই ভুল ভাঙল। বজ্র আটুঁনি ফস্কা গেরো! গেটের বাঁ দিকের অংশ খোলা! অর্থাৎ, ঢুকতে কোনও বাধা নেই।
দিন কয়েক আগে এই হাসপাতালেই পূর্ত দফতরের কার্যালয়ের সামনের চাতাল থেকে ৯ জন মদ্যপকে পুলিশ ধরেছিল। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বাইরের গেটে কোনও তালা নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই কার্যালয়ের সামনে মদ, গাঁজার মৌমাত জমে। উত্তরপাড়া, মাখলা, ভদ্রকালী এমনকী, পাশের জেলা হাওড়ার বালি-বেলুড় থেকেও নেশার টানে জড়ো হয় বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা। দিন কয়েক আগেও অফিসের সামনের ওই অংশে পাখা লাগানো ছিল মদ্যপদের হাওয়া খাওয়ার জন্য! সেই ফ্যান অবশ্য এখন নেই। অনেকেরই অভিযোগ, সচেতন ভাবেই হাসপাতালের এই অংশে আলো লাগানো হয়নি, যাতে দুষ্কর্ম যাতে চোখে না পড়ে!
মদ্যপদের পাকড়ায়ের ঘটনার পরে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা নড়েচড়ে বসেন। হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয় এক এএসআইয়ের নেতৃত্বে। ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনারেটের
কর্তারা আশ্বস্ত করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। বলা হয়, ক্যাম্পে থাকা পুলিশকর্মীদের ফোন নম্বর হাসপাতালে নথিভুক্ত থাকবে, যাতে কোনও সমস্যায় পড়লে দ্রুত পুলিশের সাহায্য চাওয়া যায়।
কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবে যোজন ফারাক! টানা ঘণ্টা দু’য়েক হাসপাতাল চত্বর ঘুরেও পুলিশকর্মীর দেখা মিলল না। হাসপাতাল কর্মীরা জানালেন, প্রথম দু’দিন দিনের বেলায় পুলিশকর্মীরা ছিলেন। তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রাতে থাকবেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হাসপাতাল কর্মী জানালেন, পুলিশকর্মীদের শেষ দেখা গিয়েছিল শুক্রবার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়েছিল, প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর পুলিশকর্মীরা খোঁজ নেবেন কোনও সমস্যা আছে কিনা। সেই প্রতিশ্রুতি রাখা হচ্ছে কোথায়!’’
নিরাপত্তার এই বহরেই হাসপাতাল কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সব থেকে করুণ অবস্থা চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিজনদের। কোন্নগরের বাসিন্দা দিবাকর মণ্ডলের দাদা মানিক ভর্তি বুকে ব্যথা নিয়ে। চিকিৎসকেরা রাতে বাড়ির কাউকে থাকতে বলেছেন। থাকবেন কোথায়? পরিজনের থাকার মতো কোনও ঘর নেই। অগত্যা স্ত্রীকে নিয়ে দিবাকর বেঞ্চে শুয়েছিলেন। বললেন, ‘‘আমাদের ক্ষমতা নেই নার্সিংহোমে যাওয়ার। বাধ্য হয়েই এখানে এসেছি। স্ত্রীকে নিয়ে এই ভাবে থাকা যথেষ্ট ঝুঁকির। কিন্তু আমরা নিরুপায়।’’ বালির বাসিন্দা অশোক দাস অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা নিয়ে মাকে ভর্তি করিয়েছেন শনিবার বিকেলে। গভীর রাতে অশোক খোলা আকাশের নীচে বেঞ্চে বসেছিলেন মশা তাড়ানোর ধূপ জ্বেলে। বললেন, ‘‘পুলিশ দেখিনি। বিকেল থেকে এতটা রাত হল, কেউ টহল দিতে আসেনি।’’
পুলিশের দাবি, ক্যাম্পের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ঘর চেয়ে পাওয়া যায়নি। তাই ক্যাম্প চালানো যায়নি। তবে পুলিশ রাতে টহল দেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, পরিস্থিতির কথা মহকুমাশাসককে (শ্রীরামপুর) জানানো হবে।