যোগদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত অভিষেকের। স্নেহাশিসের নির্দেশিকার পরেও সরব মনোরঞ্জন। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বিধানসভা নির্বাচনের পরেই বিভিন্ন দল যোগে নেতা-কর্মী-সর্থকদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। তা নিয়ে দলের অন্দরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এই পরিস্থিতিতে জেলা তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং চেয়ারপার্সন অসীমা পাত্র যৌথ ভাবে এক নির্দেশিকা জারি করে জানালেন, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন ছাড়া দলে যোগদান করা যাবে না।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে— ‘বিজেপি বা অন্য দলের কোনো নেতা-কর্মী যদি তৃণমূলে যোগদান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাহলে তাঁকে বা তাঁদের তৃণমূলে যোগদান করার জন্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র গৃহীত হলে তবেই তাঁরা তৃণমূলে যোগদান করতে পারবেন।’ দলের সমস্ত নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের এই নির্দেশ পালনের ‘অনুরোধ’ জানিয়েছেন স্নেহাশিস ও অসীমা।
হুগলি-শ্রীরামপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি স্নেহাশিস বলেন, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিপুল ভাবে জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার পর বিজেপি ও অন্য দল থেকে আসার জন্য পা বাড়িয়ে আছে বহু নেতা-কর্মী-এমএলএ-এমপিরা। তারা দলে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করছেন। আমাদের দলের এই মুহূর্তে গাইডলাইন রয়েছে, যে বা যাঁরা অন্য দল থেকে আসতে চান,তাঁদের সরাসরি আবেদন করতে হবে আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর অনুমোদন সাপেক্ষেই কাউকে দলে নেওয়া যাবে।’’
সম্প্রতি বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী নেটমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘যারা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিল, তাদের কোনও অবস্থাতেই তৃণমূলে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। আগে থেকে যারা বিজেপি-তে ছিল তারা আসতে চাইলে আবেদন করতে হবে। বলাগড়ের একদল কথিত নেতা গণ হারে বিজেপি থেকে তৃণমূলে লোক ঢোকাচ্ছে। আমি সে বিষয়ে অবগত নই।’ প্রসঙ্গত বলাগড়ের গুপ্তিপাড়ায় সম্প্রতি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় বিধায়ক মনোরঞ্জনকে জানানো হয়নি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ।
বিধায়কের এই বক্তব্য নিয়ে তৃনমূলের অন্দরেই শুরু হয় চাপান উতোর। বলাগড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অসীম মাজি পাল্টা মনোরঞ্জনের বিরুদ্ধেই সিপিএম ছেড়ে বিজেপি হওয়া এক প্রাক্তন গ্রামপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে ঘোরার অভিযোগ তোলেন। বলেন, ‘‘উনি বিধায়ক হতে পারেন, কিন্তু রাজনীতিতে কে দলে আসবে আর কে যাবে, কাকে বিজেপি দাগিয়ে দিতে হবে সেটা উনি কি পয়সা নিয়ে ঠিক করে দেবেন? দল কি ওনাকে তেমন কোনও নির্দেশ দিয়েছে?’’
প্রাক্তন বিধায়কের অভিযোগের জবাবে বুধবার মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘দলের এমন কোনও নির্দেশ নেই যে বিজেপি থেকে দলে নেওয়া হবে। কোথাও কোথাও কেউ কেউ নিচ্ছেন, জানতে পারছি। আমাদের দলের অনেকেই জানতে চাইছেন, এটা কী ভাবে হচ্ছে! আমরা দলটাকে জিতিয়েছি। তা হলে এঁদের কেন নেওয়া হচ্ছে! ’’ মনোরঞ্জনের আশঙ্কা, বিজেপি থেকে বেনাজল ঢুকে পড়লে তৃণমূলের পুরনো কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন।