পঁচিল ভেঙে ফেলা হল। আরামবাগের পারুলে। নিজস্ব চিত্র।
আরামবাগ মহকুমায় বিভিন্ন সরকারি জায়গা দখল করে বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করে নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে প্রশাসনের তরফে। আরামবাগ শহরে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছেই। কিন্তু পুরসভা একটি ‘বেআইনি’ নির্মাণ চিহ্নিত করার পরে বৃহস্পতিবার সকালে ২ নম্বর ওয়ার্ডের পারুলে একটি বাড়ির প্রাচীর যে ভাবে স্থানীয় কিছু মানুষ নিজেরাই ভেঙে দিলেন, তাতে প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট পরিবারের গৃহকর্ত্রী টুম্পা পাত্রের অভিযোগ, “পুরসভার রাস্তার কিছুটা আমার প্রাচীরে ভিতরে ঢুকে গিয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু পুরসভা বা পূর্ত দফতর সীমানা চিহ্নিত করে কোনও নোটিস পাঠানোর আগেই পাড়ার সুশান্ত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে আমাদের প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হল। তাতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” মহিলা আরও জানান, সময় নিয়ে তাঁরা নিজেরাই প্রাচীর সরালে সব ইট এবং গ্রিল পুনর্ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হল না। বিষয়টি পুরসভাকে জানানো হয়েছে।
প্রাচীর ভাঙার কথা স্বীকার করে সুশান্ত ওরফে হারু চক্রবর্তী বলেন, “আইনত আমাদের ভাঙা উচিত হয়নি, মানছি। কিন্তু গত চার মাস ধরে পুরসভায় বিষয়টি বলেও কোনও সুরাহা হচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরও পুরসভা গড়িমসি করাতেই বাধ্য হয়ে আমরা ভেঙে দিয়েছি।” তিনি জানান, মূল রাস্তা থেকে এই শাখা রাস্তাটি মাঠের দিকে গিয়েছে। সেখানে বহু মানুষ বাড়ি নির্মাণের জন্য জায়গা কিনে রেখেছেন। কিন্তু রাস্তা দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করায় মালপত্র নিয়ে গাড়ি ঢুকছিল না।
গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করে পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর ভান্ডারী বলেন, “পুরসভার জায়গা দখল করে বেআইনি নির্মাণগুলি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পারুলের সংশ্লিষ্ট জায়গাটি পুরসভার বলে চিহ্নিত হয়েছে। পুরসভা পদক্ষেপ করার আগেই এলাকাবাসী কেন প্রাচীর ভাঙলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।’’
গত ২৪ জুন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পুরপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে সরকারি জমি জবরদখল করা নিয়ে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে গত ২৬ জুন মহকুমাশাসক সুভাষিণী ই পুরসভা-সহ সরকারি সব দফতরগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পর্যন্ত অনুমতিহীন বাড়ি-সহ পুর এলাকায় প্রায় ২৫টি বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত কয়েকশো জবরদখল এবং বেআইনি নির্মাণ পাওয়া যাবে বলে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানিয়েছেন।
পূর্ত দফতরের ‘নির্মাণ ১’ বিভাগ থেকে মহকুমা জুড়ে এ দিন পর্যন্ত চিহ্নিত হওয়া ৮০টি জায়গা জবরদখল করার অভিযোগে ১৪ জনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। ‘নির্মাণ ২’ বিভাগ এবং ‘সড়ক’ বিভাগ থেকেও প্রায় একই সংখ্যক জায়গা জবরদখল রয়েছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলির সীমানাও চিহ্নিত করা চলছে। এই কাজ শেষ হলে নোটিস পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন দফতরের আধিকারিকরা। আর সেচ দফতরের বাঁধ বা চর
দখল করে বেআইনি নির্মাণের বিষয় সংশ্লিষ্ট এলাকার পুরসভা এবং ব্লক প্রশাসন দেখছে।