—প্রতীকী ছবি।
হাওড়ায় এক দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিনশোর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। সংক্রমণের গতি কমাতে আজ, মঙ্গলবার থেকে কোমর বেঁধে নামছে তারা। ঠিক হয়েছে, গত বছর লকডাউনের পরে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, ধাপে ধাপে সেই সমস্ত ব্যবস্থাই আবার নেওয়া হবে। তবে এ বার কোনও রাস্তা বা বড় এলাকা ধরে কন্টেনমেন্ট জ়োনের বদলে ‘মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন’ করা হবে। কোনও বাড়ি বা আবাসন থেকে পাঁচ জন বা তার বেশি সংখ্যক করোনা আক্রান্তের খবর এলে সেই আবাসন বা নির্দিষ্ট কয়েকটি বাড়িকে ‘মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে ঘোষণা করে নজরদারির আওতায় আনা হবে।
ভোট মিটে যাওয়ার পরে এ দিন করোনা নিয়ে জেলার সমস্ত প্রশাসনিক কর্তা, স্বাস্থ্যকর্তা ও হাওড়ার পুর কমিশনারকে নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক। সেই বৈঠকের আগে এ দিনই নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে করোনা নিয়ে যে একগুচ্ছ নয়া নির্দেশিকা রাজ্য সরকার দিয়েছে, সেগুলি অবিলম্বে বলবৎ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে গত বছরের মতো টেলিমেডিসিন পরিষেবাকেও ফের নতুন করে সক্রিয় করার কথা বলা হয়। বাজারহাট ও জনবহুল এলাকাগুলি এক দিন অন্তর জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি সেফ হোম পরিষেবা ফিরিয়ে আনারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার থেকেই ধাপে ধাপে এই সমস্ত পদক্ষেপ করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘প্রথমেই আমরা বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসব। কারণ, গত বছরের টাকা বকেয়া থাকায় বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’’ ওই কর্তা জানান, করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এর পরেই বিভিন্ন বাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসা হবে। এক-দু’দিনের মধ্যেই সেই বৈঠক হবে। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিধি মানতে কী ভাবে বাধ্য করা যায়, সেই ব্যাপারে পরিকল্পনা করা হবে।
হাওড়ার মঙ্গলাহাটে সপ্তাহে দু’দিন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। অসংখ্য বার সতর্ক করার পরেও অনেকেই সেখানে মাস্ক পরার তোয়াক্কা করছেন না। ওই বিশাল হাটেও করোনা-বিধি বলবৎ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে প্রশাসন। হাটের সংগঠনগুলির সঙ্গেও তাই বৈঠকে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের আশঙ্কা, যে ভাবে করোনা বাড়ছে, তাতে এখনই তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী মাসখানেকের মধ্যে সংক্রমণের সব রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১ এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, হাওড়ার প্রায় ১৮০০ জন সক্রিয় করোনা রোগীর মধ্যে ১৪০০ জনই হাওড়া পুর এলাকার বাসিন্দা। তাই হাওড়া শহর নিয়েই আপাতত উদ্বেগ বেশি প্রশাসনের।
বালিটিকুরি হাসপাতালকে ইতিমধ্যেই করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করে অতিরিক্ত ৬০০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে বাড়ানো হয়েছে ৫০টি ভেন্টিলেটরও। প্রস্তুত করা হয়েছে সত্যবালা আইডি হাসপাতালকেও। কিন্তু এ বছর কয়েক হাজার শয্যার প্রয়োজন হতে পারে বলেই মনে করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তাই বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে এই লড়াইয়ে শামিল করার জন্য অবিলম্বে আলোচনায় বসতে চাইছে প্রশাসন। জেলার এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, ‘‘গত বারের মতো বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি আগ্রহ না দেখালে শয্যা নিয়ে সমস্যা হবে। তাই তাদের সঙ্গে বসে করোনার চিকিৎসা শুরু করতে বলা হবে। সব ধরনের পরিকল্পনা ঠিকঠাক কার্যকর হলে সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে সংক্রমণের হার কিছুটা হলেও কমানো যাবে।’’