পদক হাতে জাহ্নবী। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর সংসার আছে। ১০ বছরের একটি সন্তানও আছে। তবু ছেলেবেলার স্বপ্ন পূরণ করতে বছর তিনেক আগে শুরু করেছিলেন প্রশিক্ষণ নেওয়া। একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে গ্যাংটকে আয়োজিত ‘জাতীয় ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ প্রথমবার নেমেই একটি সোনা-সহ তিনটি পদক জিতে নিলেন ভদ্রেশ্বরের জাহ্নবী বিশ্বাস ভট্টাচার্য। তাঁর শ্বশুরবাড়ি শান্তিনিকেতনে।
গত শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত ওই প্রতিযোগিতা হয় গ্যাংটকের তাসি নামগিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিভিন্ন রাজ্যের চারশোরও বেশি প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে গিয়েছিলেন চার জন। তাঁদের মধ্যে হুগলি থেকে ছিলেন একমাত্র জাহ্নবী। মহিলাদের পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব তিনটি বিভাগে নেমে তিনটিতেই পদক আসে তাঁর ঝুলিতে। কুমিতে সোনা, কাতা ইভেন্টে রুপো, ওপেন কাতা ইভেন্টে ব্রোঞ্জ।
চলতি বছরে রাজ্যস্তরে রুপো জিতে তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। কুমি ইভেন্টে সোনা জেতার সুবাদে আগামী বছর রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে যোগদানের যোগ্যতা অর্জন করলেন জাহ্নবী।
২০১৯-এ শান্তিনিকেতনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় ক্যারাটে প্রশিক্ষক কৌশভ সান্যালের সঙ্গে। তখন থেকেই তাঁর কাছে ক্যারাটের অআকখ শেখা। কৌশভ বলেন, ‘‘অল্প দিনের মধ্যেই জাহ্নবী ক্যারাটের মারপ্যাঁচ রপ্ত করে নেন। দেড় বছরের মধ্যে প্রতিযোগিতার রিংয়ে নেমে পড়েন। ইচ্ছা এবং সক্ষমতা থাকলে বয়স যে কোনও সমস্যা নয়, জাহ্নবী সেটা প্রমাণ করলেন।’’
গ্যাংটক থেকে ফিরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভদ্রেশ্বরের কেজিআরএস রোডে বাপের বাড়িতে বসে জাহ্নবী জানান, ১০ বছরের মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির কাজকর্ম সেরে, মেয়েকে বাড়িতে রেখে অনুশীলনে যেতে হত। প্রথম দিকে অসুবিধা হত। পরে ধাতস্থ হয়ে যাই। জাতীয় স্তরে যোগ দিতে পেরে মনের জোর বাড়ে। এ বার দেশের প্রতিনিধিত্ব করব ভেবে আরও ভাল লাগছে। মেয়ে হিসেবে কিছু করার স্বপ্ন বরাবর ছিল। সেটাই করতে চাই।’’ জাহ্নবী ঠিক করেছেন, দেশের হয়ে পদক জেতার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন। কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে ডুবিয়ে দেবেন।
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সময়ে প্রত্যেক মেয়ের ক্যারাটের অন্তত প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি বলে মনে করি। এতে শারীরিক সক্ষমতা বজায় থাকবে। নিজেকে সুরক্ষিত
রাখা সহজ হয়।’’