প্রধানশিক্ষককে স্কুল থেকে বার করে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। — নিজস্ব চিত্র।
মদের গন্ধে স্কুলের স্টাফ রুমে টেকা দায়। অগত্যা তাই বাইরে বেরিয়ে গিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কথা বলতে বলতে তোতলাচ্ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে এমন ঘটনা দেখে হতবাক এক অভিভাবিকা। তার পরেই গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে কথাটা। রটনা, মদ্যপ অবস্থায় স্কুলে এসেছেন প্রধান শিক্ষক। শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। তালা ঝুলিয়ে দেন স্কুলে। আরামবাগের ডিহালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা। রোজের এই ঘটনায় বিরক্ত অভিভাবক থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলেই। প্রধান শিক্ষক যদিও দাবি করেছেন, তিনি পানমশলা খেয়ে এসেছেন।
অভিভাবক থেকে শিক্ষিকা, সকলেই মেনে নিয়েছেন, এক দিন নয়, প্রত্যেক দিন মদ্যপান করে স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক অরুণকুমার সিংহ। প্রধান এসে সতর্ক করে গিয়েছেন। তার পরেও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে এসেছিলেন সোনালি সেন। তিনি এই কাণ্ড দেখে হতবাক। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট ছেলেকে ভর্তি করতে এসে দেখি স্যরেরা বাইরে দাঁড়িয়ে। বলছেন, যাও না ভিতরে গিয়ে দেখ। ভিতরে ঢুকে দেখি স্টাফরুমে মদের গন্ধ। তোতলাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রধান এসে সতর্ক করে গিয়েছেন। তবু কাজ হয়নি।’’
গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, প্রধান শিক্ষকই যদি মদ্যপ অবস্থায় স্কুলে আসেন, তা হলে ছাত্রছাত্রীরা কী শিখবে? নিবেদিতা নন্দী নামে এক অভিভাবিকা বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক এত মদ্যপান করেছেন, যে ঘরে ঢোকা যায় না। আমার মেয়ে দু’বছর ধরে পড়ছে এই স্কুলে। দু’বছর ধরে প্রত্যেক দিন দেখছি। রোজ রোজ যদি দেখি এ রকম চলছে, গণধোলাই দিতে বাধ্য হব।’’ অভিভাবিকার কথায় সায় দিয়েছেন স্কুলের এক শিক্ষিকাও। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘প্রধান স্যর এসে বুঝিয়ে গিয়েছেন। আজ এমন অবস্থায় এসেছেন, বাচ্চাদের সামনে মাথা কাটা গিয়েছে আমাদের। তাঁর জন্য বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্টাফ রুমে বসে থাকতে পারে না।’’
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মদ্যপানের কথা স্বীকার করতে চাননি। পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি সকালে মদ্যপান করেছি। এখন বিমল (পানমশলা) খাচ্ছি বলে গন্ধ ছড়াচ্ছে।’’ গ্রামবাসীরা এই যুক্তি শুনতে নারাজ। তাঁরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুল থেকে বার করে তালা ঝুলিয়ে দেন। স্পষ্টই জানান, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে স্কুলে তালা ঝোলানো থাকবে। আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দীপক মাজি বলেন, ‘‘খুবই নিন্দনীয় ঘটনা। সব খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’