নিজস্ব চিত্র
স্বপ্নে এসে দেবতারা পুজো প্রচলন করতে বলেন, এমন উদাহরণ অসংখ্য। কিন্তু স্বপ্নে এল রাক্ষসী! বলল তার পুজো করতে। এমন উদাহরণ একমাত্র পাওয়া যাবে চন্দননগরের ‘রাক্ষুসে বাড়ি’-তে। হুগলি জেলার এই শহরের নিচুপট্টি এলাকার অধিকারী বাড়িতে প্রবেশ করলেই নজরে পড়বে রাক্ষসীর মূর্তি। তার চোখ দুটো জ্বলছে। বড় বড় দুটি দাঁত বেরিয়ে আছে। দেখলে ভক্তির চেয়ে ভয়ের উদ্রেক হয় বেশি। সেই রাক্ষসীর মূর্তিতেই ভক্তি ভরে পুজো দেওয়া হয় নিত্য। মন্দিরে রয়েছেন রাধাগোবিন্দ, জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা। সকলেরই নিত্য পুজো হয় তিন বেলা। ভোগও দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুজো পান পুতনা রাক্ষসীও। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই বাড়িটির খ্যাতি। অনেকেই দেখতে আসেন এই মন্দির। তবে জগদ্ধাত্রী পুজো ও রথের সময় সবথেকে বেশি লোক সমাগম হয় অধিকারী বাড়িতে।
এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত রাক্ষসীর মূর্তির কোলে রয়েছেন শিশু কৃষ্ণ। কংস কৃষ্ণকে মারতে পুতনাকে পাঠিয়েছিল। কৃষ্ণকে বিষ মাখানো স্তন্যপান করিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল পুতনা। সেই পৌরাণিক আখ্যানের অনুষঙ্গ বহন করে চলা এই মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান প্রজন্মের চার পুরুষ আগে। এই অধিকারী বাড়িতেই রাধাগোবিন্দ মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় চন্দননগরে ফরাসিদের আগমনের আগে। তার পর বর্তমান পুরুষ গৌর অধিকারীর দাদু স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাক্ষসী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
কিন্তু ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতির ইতিহাস বহন করে চলা এই মন্দিরের কাঠামো আজ আর আগের মতো পোক্ত নেই। ভগ্নপ্রায় এই দেউলকে নিয়ে তাই আপাতত চিন্তায় আছেন অধিকারী পরিবারের সদস্যরা। বাড়ির গৃহকর্ত্রী ছবি অধিকারী বলেছেন, ‘‘আমার শাশুড়ির কাছে শোনা, তাঁর শ্বশুরকে রাক্ষসী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলে, তাকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করতে। রাধাগোবিন্দ মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়। তার পর থেকে দেবতা ও রাক্ষসের পুজো হয়ে আসছে একসঙ্গে। বাড়িকে 'রাক্ষুসে বাড়ি' বলে সেই থেকে পরিচিতি দেন অনেকেই। এখনও অনেক মানুষ আসেন মন্দিরে। কিন্তু এই বহু পুরোনো মন্দিরের সংস্কার প্রয়োজন।’’ স্থানীয়রা মনে করছেন, এই বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত প্রশাসনের। কারণ, প্রাচীন এক ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে এই মন্দিরের সঙ্গে। সেই প্রসঙ্গ তুলেই বর্তমান প্রজন্মের গৌর অধিকারী বলেছেন, ‘‘সংস্কারের জন্য চন্দননগর পুর নিগমকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন দেখা যাক, কী হয়।’’