বিধানসভায় ভুয়ো বিধায়ক গজানন শর্মা। নিজস্ব ছবি।
ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন গজানন শর্মা। শুধু বিধানসভা চত্বরে ‘অবৈধ ভাবে’ ঢুকে পড়া নয়, অতীতেও একাধিক বার তিনি এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। কখনও স্টেশনে টিকিট পরীক্ষক সেজেছেন। কখনও আবার পুলিশের পোশাক পরে এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বুধবার বাজেট পেশের দিনে বিধানসভায় ভুয়ো বিধায়ককাণ্ড নিয়ে হইচই হওয়ার পর এমনটাই জানাচ্ছেন গজাননের প্রতিবেশীরা।
গজানন হাওড়া পুরনিগমের বেলিলিয়াস রোডের বাসিন্দা। সেখানে পুত্রবধূ ও নাতনির সঙ্গে থাকেন তিনি। বিধানসভায় কলকাতা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, গত দু’বছরের মধ্যে স্ত্রী ও পুত্রের মৃত্যুর পরে মানসিক ভারসাম্য হারান গজানন। ২০২০ সালে তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়। পরের বছরেই মারা যান স্ত্রী। বেলিলিয়াস রোডের প্রতিবেশীরাও জানান, ছেলের কঠিন রোগে মারা যাওয়া গজানন বড় ধাক্কা। সেই ধাক্কা আজও সামলে উঠতে পারেননি বছর তেষট্টির ওই বৃদ্ধ। বরং, দিনে দিনে তাঁর মানসিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। সঞ্জয় সিংহ নামে এক পড়শি বলেন, ‘‘আগেও একাধিক বার বাড়িতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন গজানন’দা। এক বার স্টেশনে টিটি সেজে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। আর এক বার তো পুলিশ সেজেছিলেন।’’
গজাননের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। ছেলের মৃত্যুর পর তা আরও খারাপ হয়েছে। প্রতিবেশীদের কাছে পুত্রবধূর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথাও বলতেন গজানন। সঞ্জয় বলেন, ‘‘ওঁদের বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। ভুল করে বিধানসভায় ঢুকে পড়েছেন গজানন’দা! প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, ওঁর বিরুদ্ধে যাতে কড় পদক্ষেপ যাতে না করা হয়।’’
বুধবার দুপুরে বিধানসভায় যখন বাজেট বক্তৃতা করছিলেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সেই সময় লবির কাছে এক ব্যক্তিকে ইতস্তত ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। পরনে খয়েরি রঙের ট্রাউজার্স ও সাদা ফুলহাতা শার্ট। উপরে চাপানো কালো ওভারকোট। মাথায় কাঁচাপাকা চুল। চোখে চশমা। হাতে প্লাস্টিকের প্যাকেট। তাঁকে দিশাহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখে সন্দেহ হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। পরিচয় জানতে চাওয়া হলে ওই ব্যক্তি নিজেকে বিধায়ক বলে দাবি করেন। তাঁর অসংলগ্ন কথায় সন্দেহ হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আগন্তুকের নাম গজানন শর্মা। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর গজাননকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাকে আনন্দ বোস পাঠিয়েছেন। বিধানসভায় ঢোকার অনুমতি রয়েছে আমার। আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় অসংলগ্ন জবাব দিচ্ছিলেন গজানন। কখনও নিজের নাম গজানন শর্মা বলছিলেন, কখনও আবার বলছিলেন গজানন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ-ও দাবি করেন, মধ্য হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ রায়ের কথাতেই তিনি বিধানসভায় এসেছেন।