ভবিষ্যতের ভাবনা ভুলে দুর্গাপুজোর আয়োজনে নেমে পড়েন ডানলপ এস্টেটের বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।
উৎসবের মরসুম আসে-যায়। তবে দুর্গাপুজোর পুরনো মেজাজ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে ডানলপে। হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ টায়ার কারখানার এক কালের কর্মীদের কাছে উৎসবের আবেগটুকুই যেন সম্বল। ২০১২ সালে পাকাপাকি ভাবে কারখানা বন্ধ হওয়ার পর সে আবেগকে পুঁজি করেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করছেন প্রাক্তন কর্মীদের পরিবার।
ডানলপের কারখানায় তালা পড়ার পর থেকে ধীরে ধীরে জমজমাট এলাকা আজ প্রায় শ্মশানের চেহারা নিয়েছে। কারখানার ভিতরের যন্ত্রপাতি একে একে চুরি হয়ে গিয়েছে। কারখানা চত্বরে আগাছা। কর্মীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— বিধানসভা নির্বাচনের সময় ডানলপ মাঠে সভা করে গিয়েছেন দু’জনেই। তবে কারখানার ভবিষ্যৎ সে তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। তবুও কালের নিয়মে উৎসব আসে। ভবিষ্যতের ভাবনা ভুলে দুর্গাপুজোর আয়োজনে নেমে পড়েন ডানলপবাসীরা।
২০১২ সালে পাকাপাকি ভাবে ডানলপ টায়ার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। —নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৭৭ বছর ধরে ডানলপ এস্টেটের ভিতর দুর্গাপুজো করে আসছেন তাঁরা। কারখানা বন্ধের পর গত ১১ বছর ধরে বিনা চাঁদায় পুজো করছেন শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। ডানলপ এস্টেটের ভিতর পুজো হওয়ায় রাজ্য সরকারের অনুদান থেকে বঞ্চিত। এস্টেটের এক বাসিন্দা অসীমকুমার বসু বলেন, ‘‘ডানলপ কারখানা বন্ধ হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে আমাদের আর্থিক অবস্থা সঙ্গীন। দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান নেই। কারখানা কর্তৃপক্ষের সাহায্যও বন্ধ। ডানলপ কর্মীদের পরিবারগুলির উদ্যোগেই মূলত এ পুজো হচ্ছে। ১০-১২ বছর ধরে তাঁদের চাঁদায় পুজোর আয়োজন করছি। তবে আজকাল চাঁদা তোলাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। কারণ লোকের হাতে টাকাপয়সা নেই। পুজোর দিনগুলি যে কী ভাবে কাটছে, তা একমাত্র মা দুর্গাই জানেন।’’
এক কালে এ পুজো ঘিরে মাঠ জুড়ে মেলা বসত। তবে সে সব অতীত। এখন পুজোয় দু’একটা স্টল বসে। শ্রমিক পরিবারের সদস্য ঐশ্বর্য দাসের কথায়, ‘‘দাদুর মুখে শুনেছি, এক কালে ডানলপের দুর্গাপুজোয় যাত্রা হত। নামী গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা আসতেন। তবে পুজোর সে জৌলুস আর নেই। তবে সকলের চেষ্টায় আমরা পুজো করছি। পুজোর ক’দিন এখানেই পড়ে থাকি।’’