খানাকুলের নতিবপুরে মুন্ডেশ্বরী নদীর উপর বাঁশের তৈরি সেতুই এখনও ভরসা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
একটি বৈদ্যুতিক শ্মশানচুল্লি আর খানতিনেক কালভার্ট— ব্যস্। দশ বছরে খানাকুলের প্রাপ্তি বলতে এই!
নদীনালায় ঘেরা, বন্যাপ্রবণ এ তল্লাটের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বেশ কিছু সেতু এবং রাস্তা। গ্রামবাসীরা মনে করেন, সেতু এবং রাস্তা হলে তাঁদের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। আর্থিক উন্নতি হবে। কিন্তু কোথায় কী!
বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদকে যে কতদিন এখানকার মানুষ দেখেননি, মনে করতে পারেন না। ইকবাল অসুস্থ। অথচ, দশ বছর আগে প্রার্থী হয়ে প্রচারে বেরিয়ে ইকবাল আশ্বাস দিয়েছিলেন, খানাকুলকে ‘সোনাকুল’ করে দেবেন। মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেই বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে।
ইকবালের পরিবর্তে এ বার তৃণমূল প্রার্থী করেছে খানাকুলেরই বাসিন্দা নজিবুল করিমকে। কিন্তু প্রার্থী বদল হলেও মানুষের আস্থা কতটা অর্জন করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় যাচ্ছে না এলাকার তৃণমূল নেতাদের। তাঁদের গলাতেও হতাশা ধরা পড়ছে। তাঁরা নিজেদের ‘অভিভাবকহীন’ মনে করছেন।
বিধায়কের প্রতিনিধি তথা এলাকার তৃণমূল নেতা রমেশ প্রামাণিকের কথাই ধরা যাক। তিনি বলেন, “বিধায়কের অবর্তমানে উন্নয়ন যেমন থমকে গিয়েছে, তেমনই এলাকায় প্রচুর গোষ্ঠী হয়ে গিয়ে দল ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টা নিয়ে দলনেত্রী খানাকুলে বিশেষ নজর দিয়েছেন বলে জেনেছি।”
জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধরণ সম্পাদক তথা স্থানীয়
ঘোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হায়দার আলির গলাতেও এক সুর, ‘‘বিধায়ক যতদিন এখানে আসতে পেরেছেন, গ্রামীণ জল সরবরাহ প্রকল্প, নদীবাঁধের কাজ-সহ অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে বিধানসভা এলাকাটি অভিভাবকহীন হয়েইএই বিপর্যয়।”
সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথীর মতো সরকারি প্রকল্প থেকে খানাকুল বঞ্চিত হয়নি। কিন্তু ওই ‘প্রাপ্তি’ গ্রামবাসীদের কাছে ‘সাময়িক সুরাহা’ বা ‘নাকের বদলে নরুণ’-এর মতো। পোল গ্রামের মিনতি দে’র কথায়, ‘‘ও সবে কী আর এখানকার মানুষের মন পাওয়া যায়? আসল সমস্যার সুরাহা কোথায়?’’
মোট ১৯টি পঞ্চায়েত নিয়ে খানাকুল বিধানসভা এলাকা। তাকে ঘিরে রয়েছে দামোদর, রূপনারায়ণ ও মুণ্ডেশ্বরী নদী এবং বেশ কিছু শাখা নদী। ফলে, যাতায়াতের কষ্ট লাঘবের জন্য রাস্তা এবং সেতুর দাবি কমবেশি প্রায় গ্রামেই শোনা যায়। শাবলসিংহপুরের বিভাস দলুই বা পানশিউলির শক্তিপদ রায়— কেউই ক্ষোভ গোপন করেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘৬০ বছর ধরে প্রায় একই দাবি করে আসছি আমরা। বাম আমলে মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপর দিগরুইঘাটে সেতু চালু হয়। কিন্তু তারপর ওই নদীর উপরেই কেদারপুর, নতিবপুর বা ছত্রশালে এখনও কিছুই হল না।”
গ্রামগুলির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতে এতদিনে শুধু মাইনান, কলমিজোড় এবং ঠাকুরানিচকে তিনটি কালভার্ট হয়েছে। দাবি রয়েছে আরও অন্তত ৩৭টির। মুণ্ডেশ্বরী নদীর শাখা হুরহুরা খালের উপর মুচিঘাটা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬-তে। সেই কাজও মাঝপথে বন্ধ পড়ে রয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, বন্যা বা প্লাবনে প্রতি বছর অন্তত ২০টি (যেমন—ধরমপোতা থেকে গড়েরঘাট, রামনগর থেকে কয়েদতলা, মাইনান থেকে দুয়াদণ্ড, সেকেন্দারপুর থেকে মদনপুর ইত্যাদি) রাস্তা প্রতি বছর ভাঙে। কিন্তু সংস্কার হয় না। রাজা রামমোহন রায়ের জন্মস্থান রাধানগরকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করা হয়নি।