প্রতীকী ছবি।
নভেম্বর শেষ। তবুও, হুগলিতে ডেঙ্গি পুরোপুরি বাগে আসেনি। তবে, মশাবাহিত এই রোগ গত অগস্ট মাস থেকে এই জেলাকে যে ভাবে ভুগিয়েছে, গত দু’সপ্তাহে সেই প্রকোপ অনেকটাই কম। এটাই স্বস্তি স্বাস্থ্যকর্তা থেকে প্রশাসনের আধিকারিকদের। সংক্রমণের মাত্রা কমলেও পরিস্থিতি অবশ্য হালকা ভাবে নিতে নারাজ স্বাস্থ্যকর্তা থেকে চিকিৎসকেরা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়লে ডেঙ্গির হাত থেকে পুরোপুরি নিস্তার মিলবে। কিন্তু, সেটা এখনও হয়নি। মাঝেমধ্যেই গরম লাগছে। ডেঙ্গি বিদায়ের জন্য আমরা জমিয়ে ঠান্ডা পড়ার অপেক্ষায় রয়েছি।’’ এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কিছুদিনের মধ্যেই সংক্রমণ হয়তো একেবারে তলানিতে চলে যাবে। তবে, ডেঙ্গি মোকাবিলায় কার্যত সারা বছর কাজ করে যেতে হবে। কেননা, ঠান্ডা কমলেই ফের ডেঙ্গির ভাইরাস বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশার হানাদারি শুরু হতে পারে। সাধারণত, এপ্রিল মাস থেকে বিভিন্ন পুরসভা ডেঙ্গি রোধের কাজে জোর দেয়।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, এ বার বছরের প্রথম ছ’মাস হুগলিতে মোট ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭১ জন। জুলাইতে আরও ৮৮ জন সংক্রমিত হন। অগস্ট থেকে বিশেষত, শিল্পাঞ্চলে পরিস্থিতি বেলাগাম হতে শুরু করে। অগস্ট থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত— সাড়ে তিন মাসে আক্রান্ত হন প্রায় ৭ হাজার জন। কয়েক জনের মৃত্যুও হয় ডেঙ্গিতে। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয় উত্তরপাড়া এবং শ্রীরামপুর পুর এলাকায়। পুর-স্বাস্থ্যকর্মীদের ডেঙ্গি অভিযানে নামানো হয়। রাজ্য নগরোন্নয়ন সংস্থার (সুডা) পতঙ্গবিদরা বিভিন্ন শহরে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে সেই অনুযায়ী মোকাবিলার পরামর্শ দেন। কোনও কিছুতেই অবশ্য ডেঙ্গিকে বাগে আনা যাচ্ছিল না। প্রশাসনের কর্তারা চিন্তায় পড়েন। শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া এবং রিষড়া পুরসভা মিলিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন চার হাজারের বেশি মানুষ।
তবে, গত দু’সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমের দিকে। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ডেঙ্গির জন্য পৃথক ইউনিট খুলতে হয়। সেখানে ৪০ জনের উপরে রোগী ভর্তি থাকছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে সেই সংখ্যা ১০-১২ জনে নেমে এসেছিল। বৃহস্পতিবার জনা পনেরো রোগী ভর্তি ছিলেন। হাসপাতাল সুপার প্রণবেশ হালদার বলেন, ‘‘সংক্রমণ কমার সঙ্গে সঙ্গে প্লেটলেটের চাহিদাও অনেকটা কমেছে।’’
শ্রীরামপুর পুরসভা এলাকায় মোট সংক্রমণ ১৮০০ ছাড়িয়েছে। এখানে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ফিভার ক্যাম্প খুলতে হয়। পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা জানান, জ্বরের রোগী আসা কমে যাওয়ায় দিন কয়েক আগে ফিভার ক্যাম্প বন্ধ করা হয়েছে। তবে, জ্বরের রোগীর রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে যে ভ্রাম্যমাণ পরিষেবা চালু করা হয়েছিল, তা এখনও চলছে। পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় নির্দেশিকা মেনে আমরা সব করেছি। পুরকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এখন আর সমস্যা নেই।’’