রক্তদান শিবিরে কম্বল বিলির আশ্বাসেও বিতর্ক
fundraiser for Blood donation Camp

রক্তদান শিবিরের জন্য তৃণমূলের প্রতীকে চাঁদা, উপহারের আশ্বাসও 

শ্যামপুরের বিধায়ক কালীপদ মণ্ডলের এই রক্তদান শিবিরে হাজির থাকার কথা রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Advertisement

সুব্রত জানা

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০০
Share:

ছাপানো হয়েছে এমনই কুপন। —নিজস্ব চিত্র।

আগামী ১ জানুয়ারি শ্যামপুর বাছরী অঞ্চল যুব তৃণমূলের উদ্যোগে এলাকায় স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির হওয়ার কথা রয়েছে। রক্তদান করলেই মিলবে কম্বল। শিবিরের জন্য চলছে তৃণমূলের প্রতীকে কুপন ছাপিয়ে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠল। বিষয়টি নিয়ে শ্যামপুর সরগরম। শোরগোল পড়েছে তৃণমূলের অন্দরেও।

Advertisement

শিবিরের মুখ্য আয়োজক যুব অঞ্চল সভাপতি রেজুয়ান আলি খান ও যুব অঞ্চল সম্পাদক সাগর দে চাঁদা তোলার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘রক্তদান একটি সামাজিক কাজ। কিন্তু এর জন্য অনেক খরচ। মানুষই ভালবেসে টাকা দিচ্ছেন। আমরা চাঁদা কেটে দিচ্ছি।’’

কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের ক্ষোভ জানাচ্ছেন। এক প্রৌঢ়ার কথায়,‘‘ক্ষমতা না থাকলে এমন রক্তদান শিবির কে করতে বলেছে? এটা তৃণমূলের তোলাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়।’’ এক ব্যবসায়ীরও ক্ষোভ, ‘‘ব্যবসা ভাল চলছে না। তার উপর এমন জুলুম চললে তো মুশকিল। আর আমাদের থেকে নেওয়া হচ্ছে কয়েকশো করে টাকা। আর দেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকার কুপন।’’

Advertisement

শুধু চাঁদা নয়, এমন উপহারের বিনিময়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন নিয়ে আপত্তি তুলেছে রক্তদান আন্দোলন কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। রেজাউল করিম নামে এক কর্মীর কথায়, ‘‘অনেকে উপহারের লোভে রোগ লুকিয়ে রক্ত দেন। এতে রক্তগ্রহীতার জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রক্তদান শিবিরে উপহার দেওয়ার নিয়ম নেই।’’ আর চাঁদা প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘সরকারি ব্যাঙ্কে রক্তদান করলে ৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। ৫০ জনের বেশি রক্তদাতা হলে অতিরিক্ত হাজার টাকা দেওয়া হয়। বেসরকারি ব্যাঙ্কে রক্তদাতা প্রতি ১০০ টাকা করে দেয়। এরপরেও কিসের প্রয়োজন কুপন কেটে চাঁদা তোলার?’’

শ্যামপুরের বিধায়ক কালীপদ মণ্ডলের এই রক্তদান শিবিরে হাজির থাকার কথা রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূলেরই একাংশ এই অনুষ্ঠান নিয়ে সরব হয়েছেন। হাওড়া গ্রামীণের তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে কোনও চাঁদা তোলা যায় না। এটা কেন হচ্ছে, জানি না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। সাধারণ
মানুষের থেকে কোনও টাকা নেওয়া যাবে না।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘রক্তদান সামাজিক কাজ। এটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এখানে কুপন কেটে চাঁদা তোলা ঠিক নয়।’’

বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিরোধীরাও। শ্যামপুরের কংগ্রেস নেতা আতিয়ার রহমান বলেন, ‘‘দুর্নীতি করে করে তৃণমূল নেতাদের পকেট ভর্তি। তারপরও তারা রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠানের নাম করে তোলাবাজি করছে। এর থেকে লজ্জার আর কিছুই নেই।’’ শ্যামপুরের বিজেপি নেতা কৌশিক চক্রবর্তীরও কটাক্ষ, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের জন্য তৃণমূল এই থেকেই ধীরে ধীরে টাকা তুলছে। তোলাবাজি তো তৃণমূলের রাজত্বে এখন একটা
বড় শিল্প!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement