Communal harmony

দুর্গাপ্রতিমা আনা থেকে অঞ্জলি, সবেতেই দায়িত্ব জহিরউদ্দিনের

ধনেখালি হল্ট স্টেশন থেকে পশ্চিমে দশঘড়া যাওয়ার রাস্তার পাশেই এই পুজো বেশ পুরনো। এক সময় ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে। আটচালার ফাঁকা মাথায় ত্রিপল টাঙাতে হত।

Advertisement

প্রকাশ পাল

ধনেখালি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ১০:১২
Share:

মণ্ডপ তৈরিতে ব্যস্ত জহিরউদ্দিন। ছবি: তাপস ঘোষ

চতুর্থীর সকাল। বুড়ো বকুল গাছের পাশে মণ্ডপ জুড়ে ব্যস্ততা। ঝালাই করছিলেন জহিরউদ্দিন মোল্লা। তার মাঝেই কাউকে নির্দেশ, ‘‘ফিতেটা নিয়ে আয়।’’ কাউকে বলছেন, ‘‘পালিশটা জলদি ধর!’’

Advertisement

মনে হচ্ছিল, ‘হেড মিস্ত্রি’! ভুল ভাঙল কিছুক্ষণেই। যখন চাঁদা নিয়ে কথা হল। রাতে ঠাকুর আসবে। তার ব্যবস্থা করতে হবে। সবেতেই মধ্যমণি মধ্য চল্লিশের জহিরউদ্দিন। গত ২৫ বছর হুগলির ধনেখালির বেলমুড়ি পঞ্চায়েতের রুদ্রাণী গ্রামের পুজোর সম্পাদক জহিরউদ্দিন। অনুমতির জন্য দৌড়ঝাঁপ, ঠাকুর আনা, দশকর্মা বা ফলমূলের বাজার, অষ্টমীর অঞ্জলি— সবেতেই তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন চট্টোপাধ্যায় বলেই ফেললেন, ‘‘ওকে ছাড়া পুজো ভাবাই যায় না। খুব সক্রিয় এবং দায়িত্ববান।’’

ধনেখালি হল্ট স্টেশন থেকে পশ্চিমে দশঘড়া যাওয়ার রাস্তার পাশেই এই পুজো বেশ পুরনো। এক সময় ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে। আটচালার ফাঁকা মাথায় ত্রিপল টাঙাতে হত। সেই চেহারা বদলের শুরু ১৯৯৬ সাল থেকে। জহিরুদ্দিনের কথায়, ‘‘তখন সবে উচ্চ মাধ্যমিক। কয়েক জন বন্ধু মিলে সবাইকে বললাম, কেন ভাল করে পুজো হবে না?’’ শুনে গ্রামবাসীরা এগিয়ে এলেন। চাঁদা বাড়ল। ২০০০ সাল নাগাদ পাশের ফাঁকা জায়গায় মণ্ডপ বাঁধা শুরু।

Advertisement

প্রথমে পুজোয় জহিরুদ্দিনের গা-ঘেঁষাঘেঁষিতে দু’-এক জন নাক সিঁটকেছিলেন। নিজের সম্প্রদায়েরও কেউ কেউ কিছুটা আপত্তি করেছিলেন। কোনও আপত্তিই বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। দু’-এক বছরের মধ্যেই পুজোর সম্পাদক হন জহিরউদ্দিন। তখন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ এই পদে তিনিই। এ বার যুগ্ম সম্পাদক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বর্ধমান মেডিক্যালের চিকিৎসক। খানিক তফাতেই রুদ্রাণী জামা মসজিদ। তারও সম্পাদক জহিরউদ্দিন।

সবাই এক বাক্যে জানালেন, মানুষটা পরোপকারী। সকলের সুখ-দুঃখে থাকেন। তবে শুধু তিনি নন, চন্দন, বিকাশ ঘোষ, দীনবন্ধু আঢ্যদের হাতে হাত লাগিয়ে পুজোর আয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ ইলিয়াস, হাবিবুল্লা মল্লিকেরাও। জহিরউদ্দিনের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সানজিদা সুলতানা বাড়িতে ছবি আঁকছেন। মণ্ডপে টাঙানো হবে।

জহিরউদ্দিনের শেড, গ্রিলের ব্যবসা। মণ্ডপের টিন, অ্যালুমিনিয়াম এসেছে তাঁর কারখানা থেকেই। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘সত্যিই হেড মিস্ত্রি হয়ে কাজ করছি। যা বৃষ্টি, কাপড়ের প্যান্ডেলে সমস্যা হতে পারে। এতে হবে না।’’

কথার মাঝে হাবিবুল্লা বলে ওঠেন, ‘‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’’ চন্দন, বিকাশরা মাথা নেড়ে জানান, ইদ, মহরমে তাঁরাও যোগ দেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার বা কোথাও সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবরে তাঁরা ব্যথিত হন। তাঁরা নিজেরা বারো মাস বেঁধে বেঁধে থাকেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement